#মুম্বই: ১৩ বছরের রাজেশ পৌঁছেছে রকফোর্ড বয়েজ হাই স্কুলে। প্রথমবার বাড়ি ছেড়ে একা... খানিক দুঃখই হচ্ছিল ! রাজেশের প্রিয় বন্ধু দু'জন। একজন সেলভা, নরম মনের মানুষ, দ্বিতীয়জন ডেভিড, খুব রগচটা। স্কুলে রাজেশের বেশ ভাল সময়ই কাটতে থাকে। সে প্রথম বাবা-মায়ের সুরক্ষিত দুনিয়া ছেড়ে একা অল-মেল বোর্ডিং স্কুলের দিনরাত, নিত্যনতুন কতশত অভিজ্ঞতা!
স্কুল-এ 'ফেট', যেখানে প্রতিবছর ছাত্রীরাও অংশ নেয়। এদিন ছাত্রদের বড় চ্যালেঞ্জ, অন্তত একটি মেয়েকে তো প্রেম নিবেদন করতেই হবে! রাজেশের এই বিষয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই, কিন্তু সেলভা জোর করায় যেতে রাজি হয়। সেদিনই আবার চোট লাগায় ডেভিড ফেট-এ যেতে পারছিল না। সে রাজেশকে বলে, গার্লস স্কুলের মালতীকে একটা কার্ড দিয়ে দিতে! এবার গল্প অন্যদিকে মোড় নেয়, মালতী রাজেশকে পছন্দ করে ফেলে! রাজেশের জন্মদিনে স্কুলের পিটি টিচার মিস্টার ম্যাথ্যিউ রাজেশকে নিয়ে মালতীর স্কুলে আসেন। এই খবরটা গিয়ে পোঁছায় হেড মাস্টারের কানে। এদিকে মালতী আর রাজেশ তো বেশ জমিয়ে সময় কাটাচ্ছে, জীবনের প্রথম চুমু...উফফ...গায়ে কাঁটা দেওয়া দৃশ্য! এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়ায়... শিক্ষকের বকা, বন্ধুত্বের ভুল বোঝাবুঝি, প্রেমে ব্যথা- পর্ব পেরিয়ে সবশেষে 'হ্যাপি এন্ডিং'
১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া ইংরেজি ভাষার ভারতীয় ছবি 'রকফোর্ড' বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল তরুণ প্রজন্মের কাছে! শুধু ভাল-প্রাসঙ্গিক গল্প নয়, এই ছবির একটা গান 'ইয়ারো দোস্তি বরেহি হসিন হ্যায়' ছিল মারকাটারি পপুলার! কলেজ ক্যান্টিন থেকে স্কুলের টিফিন ব্রেক, গড়ের মাঠে ট্রামের অন্দর... ৯০-এর দশকে রাজ করত এই গানটা! গায়ক সদ্য বাজারে আসা তরুণ সঙ্গীতশিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নথ!
তখন ১৯৯৯ সাল। সবে দেশে লঞ্চ হয়েছে সোনি মিউজিক। সংস্থা হন্যে হয়ে খুঁজছে নতুন একটা গলা। লঞ্চ হলেন কৃষ্ণকুমার কুন্নথ ওরফে কেকে । বাজারে এল তাঁর প্রথম অ্যালবাম 'পল'! অ্যালবাম কম্পোজ, অ্যারেঞ্জ ও প্রযোজনা করেছিলেন কলোনিয়াল কাজিনস-এর লেসলি লুইস! লিরিক্স লিখেছিলেন মেহবুব। শুধু মুক্তির অপেক্ষা! রিলিজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তরুণ প্রজন্মে যাদু করে ফেলল কেকে-র দরাজ গলা! 'আপ কি দুয়া', 'ইয়ারোঁ' আর টাইটেল ট্র্যাক 'পল' যেন ৯০-এর 'অ্যান্থেম সং'! প্রেমে, বিচ্ছেদে, বন্ধুত্বে একটাই হাতিয়ার... '' 'ইয়ারো দোস্তি বরেহি হসিন হ্যায়'...
কাট... সিন টু! ৩১ মার্চ, কলকাতা! সরগরম নজরুল মঞ্চ... মঞ্চ দাপাচ্ছেন কেকে, সেই মানুষটা যিনি ৯০-এর প্রজন্মকে ভালবাসা শিখিয়েছেন, তাঁর গান গুনগুনিয়েই ভীতু ছেলেটা লাল গোলাপ দিয়েছিল স্কুলের তাবড় সুন্দরীকে...তাঁর গানকে সম্বল করেই ৯০-এর প্রজন্ম আলপিন হাতে কারগিল যেতে পারত! সেই কেকে, সঙ্গীতশিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নথ! মঙ্গলবার কলকাতায় গুরুদাস কলেজের এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি, গান করছিলেন, মশগুল ছিল দর্শকাসন, আচমকাই ছন্দপতন... কেকে আর নেই... অনুষ্ঠান চলাকালীন হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয় সঙ্গীতশিল্পীকে।
খবরের বুলেটিন-এ চলছে 'প্রয়াত কেকে', মোবাইলে নোটিফিকেশন আসছে 'সিঙ্গার কেকে ডায়েজ অ্যাট দ্য এজ অফ ৫৩'...
গড়ের মাঠ-বালিগঞ্জ লেক-এ রাজেশ-মালতী এখনও চুমু খাচ্ছে, রাজেশ-ডেভিড-সেলভা এখনও দেদার ঝগড়া-খুনসুটি করছে, মিস্টার ম্যাথ্যিউ-রা এখনও প্রশ্রয় দিচ্ছেন, এখনও ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে 'ইয়ারো দোস্তি বরেহি হসিন হ্যায়'... শুধু খবরের বুলেটিন-এ চলছে 'প্রয়াত কেকে', মোবাইলে নোটিফিকেশন আসছে 'সিঙ্গার কেকে ডায়েজ অ্যাট দ্য এজ অফ ৫৩'...
ধুর! কেকে-দের আবার মৃত্যু হয় নাকি...
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: KK