নিরন্তর তিনি চেষ্টা করে চলেছেন প্রাসঙ্গিক থাকার। ক্যামেরার লেন্সই যেন তাঁর জীবনের আয়না। দশকের পর দশক, তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। তবে এখনও যেন আনকোরা। এত জেনেও যেন জানা বাকি অনেক। তিনি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এই প্রথম তাঁর ছবি, প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার আগে, দেখানো হবে ছোট পর্দায়। আগামী ছবি‘নিরন্তর’, বর্তমান পরিস্থিতিতে তৈরি অনিশ্চয়তা, এই সব কিছু নিয়ে কথা বললেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।(সাক্ষাৎকারের জন্য স্থির সময়ের আগেই হাজির তিনি। নির্দিষ্ট সময়ের এক মিনিট আগে, তিনি টেক্সট মেলেজে জানান, যে তিনি প্রস্তুত।)
প্র: ‘নিরন্তর’ ছবিটি বহু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছে। তবে এই টিমটা নতুন। চন্দ্রাশিসের প্রথম পরিচালিত ছবি। এই ছবিটির মেরিট রয়েছে, সেটা আগে বুঝতে পেরেছিলেন?দেখুন আমি চেষ্টা করি নতুনদের সঙ্গে কাজ করার। চন্দ্রাশিসের সঙ্গে বহু দিনের পরিচয়। ও কেজি-র (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়) সহকারী হিসেবে কাজ করেছে বহুদিন। ওর মধ্যে প্রতিভা রয়েছে, সেটা আঁচ করতে পেরেছিলাম। মনে হয়েছিল ছেলেটা একটু অন্য রকমের ছবি করতে চায়। হালকা মেজাজে একবার বলেছিলাম কোনও স্ক্রিপ্ট শোনানোর ইচ্ছে হলে, শোনাতে পারিস।প্র: তারপর?একদিন এসে বলল, ‘একটা স্ক্রিপ্ট লিখেছি, শুনবে?’ আমার যেটা ভাল লেগেছিল যে, আমাকে কেন্দ্র করে, একটা গল্প শোনাতেই পারতো। মানে একটা বাণিজ্যিক নিরাপদ ছবি নিয়ে আমার কাছে আসতে পারত। কিন্তু চন্দ্রাশিস সেটা করেনি। সম্পূর্ণ অন্য রকম একটা গল্প নিয়ে এল। আমার মনে হয়েছিল, ছবিটা হওয়া উচিত। ও কিছু নতুন মুখ খুঁজছিল ছবির জন্য। আমি কাস্টিংটা ওকে ওর মতো করে করতে দিয়েছি। অঙ্কিতা, সত্যম এদেরকে চন্দ্রাশিস নিতে চেয়েছে। আমি কোনও বাধা দিইনি।প্র: পুরো টিমটা নতুন, অপর দিকে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এত বড় একজন স্টার। সহ অভিনেতারা নিশ্চয় ভয় পেয়েছেন। কিংবা মুগ্ধতা কাটিয়ে উঠতে সময় লেগেছে?আমার না এটা অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। সারা জীবন এতো নতুনদের সঙ্গে কাজ করেছি। আমি বুঝি, অপর দিকের নতুন অভিনেতার মনের অবস্থাটা। বুম্বাদা একজন স্টার, এতো সিনিয়র অভিনেতা, অনেক কিছু চলে ওঁদের মনের মধ্যে। প্রথম দু’তিন দিনে ব্যাপারটা আমি হ্যান্ডেল করে নিই। সটার নয়, বুম্বাদা হয়ে উঠি। যদি বুঝতে পারি কেউ ঘাবড়ে যাচ্ছে, তাঁকে ডেকে গল্প করি। চা-কফি খাই। এখন মনে হয়, আমি তো বড়। এটা আমার কর্তব্য। এটা যদি আমি না করতে পারি, তাহলে পরিচালকের কাজ করতে অসুবিধে হবে।প্র:‘নিরন্তর’-এর ট্রেলরে অনেকগুলো স্তর চোখে পড়ে, যদি একটু ভেঙে বলেন?দু’টো মানুষের অদ্ভুত জার্নির মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে ছবির গল্প। প্রকৃতির খুব বড় একটা ভূমিকা রয়েছে ছবিতে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এটা তো সবচেয়ে বড় সত্যি। প্রকৃতির চাওয়াতেই তো সব ঘটছে। ছবিতে আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়র ও সত্যম প্যারা টিচার। কাজর সূত্রে এক জায়গায় যাই আমরা। তারপর নানা কিছু ঘটে। এইটুকু বলতে পারি খুব ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে ছবিটা শেষ হয়। একটা অন্য রকমের ছবি। সৌমিক হালদারের অনবদ্য ফ্রেম ছবিটিতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে।প্র: আচ্ছা ‘নিরন্তর’ ছাড়াও আপনার আরও দু’টো ছবি তৈরি রয়েছে। সেগুলো মুক্তি পাওয়ানোর কোনও ভাবনা চিন্তা চলছে?হ্যাঁ। ‘কাকাবাবু’ ও ‘কাবেরীর অন্তর্ধান’, এই দু’টো ছবি একেবারে তৈরি। তবে এখনই অন্য কোনও প্ল্যাটফর্মে মুক্তি নিয়ে কোনও কথা হয়নি। এরপর শিবুর (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) দু’টো ছবি রয়েছে। তবে সেরকম ভাবে কোনও প্ল্যানিং নেই। ভাল চিত্রনাট্য পড়ছি। সেগুলকে ঘষামাজা করছি।প্র: আপনি ইন্ডাস্ট্রির বটবৃক্ষ, আপনিও সকলের মতো অনিশ্চয়তায় ভুগছেন?বিনোদন শিল্প সবচেয়ে অনিশ্চিত জায়গায় রয়েছে। ধারাবাহিক, ছোট টিম নিয়ে শ্যুট করা যায়। বাড়িতে কয়েকজন মিলে সেটা মানুষ দেখেন। ওয়েব সিরিজ সকলে একা দেখেন। সিনেমা এমন একটা মাধ্যম, যেটা তৈরি করতেও অনেকজন লাগে। সেটে শ্যুট করা সম্ভব নয়। অনেক লোকেশন বদল করতে হয়। হলে গিয়ে, অনেকে মিলে, ছবি দেখতে হয়। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আমাদের। বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছি। আমার মন বেশ অস্থির। খুব অসহায় লাগছে। ধৈর্য ধরতে হবে। আর তো কোনও উপায় নেই। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি, সব যাতে ঠিক হয়ে যায়।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Nirontor, Prosenjit Chatterjee