#মুম্বই: 'রং বরষে ভিগি চুনরওয়ালি, রং বরষে"। এই গানে তুমুল নাচছেন বলিউডের সব থেকে হট কাপল অমিতাভ ও রেখা। রেখার সারা শরীর রঙে ভেজা। ওড়না টেনে ধরে গান গাইছেন অমিতাভ। পাশে দাঁড়িয়ে এই নাচ দেখছেন রেখার স্বামী সঞ্জীবকুমার ও অমিতাভের স্ত্রী জয়া বচ্চন । কথা হচ্ছে 'সিলসিলা' ছবি নিয়ে। এই ছবির এই গান সর্বকালের জন্য দাগ কেটেছিল মানুষের মনে। রঙের গান মানেই ছবিতে এক আলাদা মাদকতা। কিন্তু প্রশ্ন হল কে প্রথম ভেবেছিলেন যে এই উৎসবকে যদি পর্দায় তুলে ধরা হয় তাহলে গোটা সিনেমার চিত্রটাই বদলে যেতে পারে। কারণ এই বিষয়টাই কালারফুল। আর যেদিন থেকে আমাদের সিনেমা রঙিন হতে শুরু করেছে তারপর থেকে এই হলির দৃশ্যের মর্যাদা আরো বেড়েছে বই কমেনি। চলচ্চিত্রে হোলির দৃশ্যের শুরু পঞ্চাশের দশকের প্রায় শেষের দিকে। পরিচালক মেহবুব খানের ‘মাদার ইন্ডিয়া’ (১৯৫৭) ছবিতে নৌশাদের সুরে শামশাদ বেগমের গাওয়া ‘হোলি আই রে কানহাইয়া’ প্রথম হোলির গান। হোলির গুলাল উড়তে শুরু করেছিল পর্দা জুরে।তবে এই ছবিটা কিন্তু সম্পূর্ণ রঙিন ছিল না। এই ছবি তৈরি করা হয়েছিল ইনস্টাম্যান কালারে।
এর পর থেকে বলিউডে বার বার ফিরে ফিরে এসেছে হোলির দৃশ্য। এরপর ১৯৬০। ছবির নাম 'কোহিনুর'। রং ভরা পিচকিরি দিয়ে মীনাকুমারীকে রং দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছেন দিলীপকুমার। লতা ও রফির ডুয়েট 'তন রঙ্গ লো জি মন রঙ্গ লো"। আপামর সিনেমা প্রেমিকে ভাবতে বাধ্য করেছিল এ ছবি। তারপর ১৯৬৩-তে এল পণ্ডিত রবিশঙ্করের সুরে 'গোদান' ছবি। মহম্মদ রফির কণ্ঠে ‘হোরি খেলত নন্দলাল ব্রিজ মেঁ হোরি খেলত নন্দলাল’ গানটি ছিল ষাটের দশকের হোলির সেরা গান। এই ছবিতে মেহমুদের অভিনয় ছিল দেখার মতো।
সত্তরদশকে এসে হোলির আইকনিক গান হয়ে উঠেছিল পরিচালক শক্তি সামন্তর ‘কাটি পতঙ্গ’ (১৯৭১) ছবির কিশোরকুমারের গাওয়া ‘আজ না ছোড়েঙ্গে বাস হাম চোলি, খেলেঙ্গে হাম হোলি’। এ-বছর আর একটি হোলির গান মাত করে দিয়েছিল ‘পরায়া ধন’ (১৯৭১) ছবিতে মান্না দে-আশা ভোসলে-র ‘হোলি রে হোলি রঙ্গো কি টোলি’। এই ট্র্যাডিশন সব সময় বয়ে নিয়েই ২০০৩ সালে জনপ্রিয় হয়েছিল পরিচালক রবি চোপড়ার ‘বাগবান’ (২০০৩) ছবিতে অমিতাভ বচ্চন, উদিত নারায়ণ, সুখবিন্দর সিং, অলকা ইয়াগনিকের গাওয়া ‘হোরি খেলে রঘুবীরা’ (২০০৩) গানটিও প্রভূত জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু জনপ্রিয়তার নিরিখে ‘সিলসিলা’ ছবির ‘রঙ্গ বরষে ভিগে চুনরওয়ালি’ গানটিকে আজও কেউ টপকাতে পারেনি! এমনকী প্রিতমের সুরে বিশাল দাদলানি-শাল্মলি খোলগাড়ের গাওয়া ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ (২০১৩)-র ‘বলম পিচকারি’ও নয়। জনপ্রিয়তার নিরিখে হিন্দি ছবির হোলির গানে টেক্কা দিতে পারে কিশোরকুমার-লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘শোলে’র ‘হোলি কে দিন দিল খিল জাতে হ্যায়’ গানটি। হোলির গান এটি আজও সমানভাবে জনপ্রিয়। রং, সিনেমা এবং হোলি এই তিনে মিলে পর্দা সব সময় রঙিনই হয়েছে। মানুষের মনে দাগ কেটে থেকেছে সব সময়। তবে এই ছবিগুলো ছাড়াও বর্তমান হিন্দি ছবিতে হোলির দৃশ্য নিয়ে অনেকরকম কাজ করা হয়। যেমন 'রামলীলা' ছবিতে রণবীর সিং ও দীপিকার রং খেলার দৃশ্যও কিন্তু সর্বকালের সেরা হয়ে থাকবে।