হোম /খবর /বিনোদন /
কৃষকের ঘাম-রক্তের ফসলেই একদা সোনা ফলত রুপোলি জগতে

কৃষকের ঘাম-রক্তের ফসলেই একদা সোনা ফলত রুপোলি জগতে: চাষিভাইদের পাশে কেন তারকারা?

মনোজ কুমারের 'শহীদ' ছবির প্রিমিয়ার। একটু পিছিয়ে থেকেই শুরু করা যাক। নস্টালজিয়া নয়, আবেগের বশে নয়, তার চেয়েও বেশি সত্য অনুসন্ধানের তাগিদে।

  • Last Updated :
  • Share this:

শর্মিলা মাইতি

#মুম্বই: মনোজ কুমারের 'শহীদ' ছবির প্রিমিয়ার। একটু পিছিয়ে থেকেই শুরু করা যাক। নস্টালজিয়া নয়, আবেগের বশে নয়, তার  চেয়েও বেশি সত্য অনুসন্ধানের তাগিদে। সেই ঐতিহাসিক প্রিমিয়ারে উপস্থিত হলেন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। মনোজ কুমারের সঙ্গে স্বল্প বাক্যালাপের পরে আসল কথাটা বলে ফেললেন। স্মৃতিচারণে লিখেছেন মনোজ, " বাবুজি জানালেন, কৃষকদের জীবন নিয়ে একটি ছবি বানান। সত্যনিষ্ঠ ছবি। যার দীক্ষামন্ত্র হবে, জয় জওয়ান, জয় কিষাণ! উত্তরে আমি শুধু বলেছিলাম, আপনার আশীর্বাদ চাই বাবুজি।  আর কিছু না! ওঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছিলাম। তার কয়েক দিনের মধ্যেই লিখেছিলাম উপকার ছবির স্ক্রিপ্ট।"

বাকিটা ইতিহাস। 1967 সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবি, ভারতের মতো এক কৃষিভিত্তিক দেশের মানসিকতা এত গভীর শিকড় গাড়বে তা হয়ত স্রষ্টাও ভাবতে পারেননি। মহেন্দ্র কপূরের কণ্ঠে, গুলশন কুমার মেহতার কলমে 'মেরে দেশ কি ধরতি সোনা উঘলে, উঘলে হিরে মোতি', প্রতি উচ্চারণেই বার বার মনে পড়াবে চাষিভাইদের কথা। প্রতি বারই সংযুক্ত করবে মাটির সঙ্গে। প্রতি প্রজন্মের কাছেই হবে প্রাসঙ্গিক।প্রাসঙ্গিক বলেই আজকের কৃষক আন্দোলনের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন বলিউডের কোনও কোনও তারকা। তথাকথিত বড় তারকাদের অতটা উদ্বেল হতে দেখা গেল না। কিন্তু প্রথম স্পষ্ট স্বর পাওয়া গেল অঙ্গদ বেদীর কণ্ঠ থেকে। প্রথম যিনি বললেন, জানি না এত অত্যাচার কেন করা হচ্ছে ওঁদের উপর। এই শীতে কেন জলকামান দাগা হচ্ছে তাঁদের উপর! এঁরাই তো মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের উদরপূর্তি করেন!
দিলজিত দোসঞ্জও চুপ থাকতে পারেননি। রাস্তায় গিয়ে বসলেন তাঁদের পাশে। পঞ্জাবী গানের কিংবদন্তি-স্বরূপ গুরুদাস মানও দাঁড়ালেন পাশে। আলিঙ্গন করলেন তাঁদের। এই মহামারীতেও! সোচ্চার হলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়াও। আমাদের অন্নদাতার যোগ্য প্রাপ্তি ও সম্মান থেকে বঞ্চিত করা মানে নিজেদেরই অপমান। রাজনৈতিক ব্যাখ্যা যা-ই হোক, এই ফসলই আমাদের প্রাথমিক প্রয়োজন। বলেছেন প্রিয়াঙ্কা।কিন্তু সিংহভাগ কেন চুপ রইলেন? কোনও রাজনৈতিক রঙে দেগে যাওয়ার ভয়ে? এঁদের হয়ে কথা বললে কি কোনও বিপদ আসতে পারে? একঘরে হয়ে যেতে পারেন তাঁরা?

এরকমই নানা প্রশ্নের মেঘ মনে জমবেই। একসময়ে যা ছিল জনপ্রিয়তার মানদণ্ড, আজ কি এতটাই বিচ্ছিন্ন আজকের হিন্দি ছবির জগত। এতটাই বিনোদনমুখী যে, মৌলিক দায়িত্ববোধও হারিয়েছে? এমন বললে একটু সরলীকরণ হয়ে যায় কি? অতিসম্প্রতি বহু জটিল সামাজিক সমস্যা নিয়ে বাস্তবমুখী ছবির সংখ্যাও তো নেহাত কম নয়। তাহলে সংঘাতের উৎস কোথায়?

1953 সালে বলরাজ সাহনি-নিরূপা রায় জুটির 'দো বিঘা জমিন'। আজও যেন চাবুক মেরে বুঝিয়ে দেয়, বাস্তব কাকে বলে। তারও কয়েক বছর পর, 1957 সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সেই ইতিহাস সৃষ্টিকারী ছবি, 'মাদার ইন্ডিয়া'র পোস্টারই তো আইকন হয়ে গিয়েছিল। লাঙল হাতে নার্গিস। অপূর্ব আলো পড়েছে তাঁর ঘর্মাক্ত মুখে। মাতৃময়ী দেশমাতৃকা। যে পোস্টারের রূপকার্থই ছিল ইউএসপি, নার্গিসের স্টার ভ্যালু নয়।  সেই ছবি বিশ্বদরবারে মনোনয়ন পেল। ভারতীয় সিনেমা প্রথম মনোনয়নপত্র জমা দিল অস্কার পুরস্কারের বিদেশী ছবির বিভাগে। সালটা 1958।

2001 সালে 'লগান' আবার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। অস্কার আঙিনায় সরাসরি লড়েছিল আমির খান অভিনীত, আশুতোষ গোয়ারিকরের এই ছবি। জিততে না পারলেও, কৃষক সমস্যার চেয়ে বিনোদনের উপরেই ভরকেন্দ্র ছিল বেশি।  সময় যত এগোলো, ততই সেই আইডেনটিটি থেকে দূরে সরে আসতে হল কেন? সরাসরি কৃষক সমস্যার উপর শেষ মেনস্ট্রিম ছবি 'পিপলি লাইভ' । 2010 সালে কৃষক আত্মহত্যার বিষয়ের উপর আধারিত সেই ছবিটিও বহু প্রশংসিত। তার এক বছর আগে 2009 সালে জ্যাকি শ্রফ, সোহেল খান, দিয়া মির্জা অভিনীত 'কিসান' ছবিটিও কৃষক সমস্যা নিয়েই। যদিও তেমন দর্শক হয়নি।

মোদ্দা ব্যাপারটা আরও আশ্চর্যজনক। একসময় জয় জওয়ান, জয় কিষাণ  ছিল একপ্রকার রাজনৈতিক মতাদর্শই যা সিনেমার মাধ্যমে বৃহত্তর জনসংখ্যার কাছে পৌঁছত। আজ কেন কিষাণেরা একা হয়ে গেলেন? কেন সিনেমা জগত আশ্চর্য নির্লিপ্ত? এখন সময় প্রশ্নটা নিজেদের করার। দেশ কি ধরতির ধারকদের চোখের জল,  সত্যিই কি পরিবর্তন আনবে?

Published by:Akash Misra
First published:

Tags: Bollywood, Farmers