#শালডাঙা: আবারও ডাইনি অপবাদে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হল এক আদিবাসী পরিবারকে। ডাইনি অপবাদ নিয়ে বৃদ্ধা বর্তমানে আশ্রয়হীন। কারণ বৃদ্ধা সরলা হেমব্রমের একমাত্র ছেলে চুনকা হেমব্রম নিজের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বর্তমানে বসবাস করছে শ্বশুরবাড়িতে। ঘটনাটি ঘটেছে মেদিনীপুর সদর ব্লকের মনিদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের শিরিষডাঙা গ্রামে। জানা গিয়েছে, গত চার মাস আগে আদিবাসীদের এক অনুষ্ঠানে ডানগুরু (গুনিন) নিদান দেয় সরলা হেমব্রম ডাইনি, তাই তাকে ঐ গ্রামে আর থাকতে দেওয়া যাবে না। তারপরই গ্রামবাসীরা ভিটেমাটি ছাড়া করে সরলা হেমব্রম সহ তার পরিবারকে। ছেলে বউমাও নিজেদের সাথে রাখতে চাননি বৃদ্ধা মাকে। বর্তমানে সরলা হেমব্রম ঠাঁই হয়েছে শালডাঙা গ্রামে নিজের ভাইয়ের বাড়িতে।
সরলা দেবি জানিয়েছেন, গ্রামবাসীরা তার উপর নানা ভাবে অত্যাচার করত। কখনও তাঁকে রাতে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হত না, তো কখনও মরা কুকুর এনে তার বাড়ির দরজায় রেখে দেওয়া হত। এছাড়াও তাকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দিত গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের অত্যাচারের ফলে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। পরে তার ভাই স্বপন সরেন দিদির চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ্য করেছেন। তবে সরলা দেবি চান প্রশাসনিক সাহায্যে আবার নিজের বাড়িতে ফিরতে। ছেলে, বউমা, নাতি নাতনিদের নিয়ে আগের মত থাকতে। অন্যদিকে তার ছেলে, বৌমাও চায় তাদের পুরনো বাড়িতে ফিরতে। সরলার বউমা দুলি হেমব্রম জানায়, শাশুড়ি তাঁদের উপর নানা ধরনের অত্যাচার করতেন। বাংলা আবাস যোজনার বাড়ি তৈরির টাকা এসেছিল।
প্রথম পর্যায়ের কাজ হওয়ার পর আর এগোয়নি বাড়ি তৈরীর কাজ। ফলে এখনও সরলা হেমব্রমের সংসার ছন্নছাড়া হয়ে রয়েছে। এব্যাপারে স্থানীয় উপপ্রধান অঞ্জন বেরা জানান, এর আগেও এই ধরনের দুটো ঘটনা ঘটেছিল। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে তাদের বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রেও পঞ্চায়েত তরফে তারা সরলা হেমব্রমকে তাঁর বাড়ি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন। অন্যদিকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদক নন্দদুলাল ভট্টাচার্য বলেন, এই ধরনের ঘটনা আগের থেকে কমলেও বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু কিছু এলাকায় ঘটছে । তবে তারা পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে ঐ বৃদ্ধাকে পুনরায় তাঁর বাড়িতে ফেরানোর পদক্ষেপ নেবেন।