#কলকাতা: কোভিড ১৯-এর কল্যাণে লকডাউন শুরু হওয়ার পর সারা বিশ্ব অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে ওয়র্ক ফ্রম হোম পদ্ধতিতে। তার পর নানা সমীক্ষাও চলেছে বাড়ি বসে অফিসের কাজের এই ধরন নিয়ে। প্রায় সব সমীক্ষারই দাবি এক- এই কর্মসংস্কৃতি অতীব নঞর্থক এক পরিমণ্ডলে নিয়ে যাচ্ছে কর্মীকে। তাঁর ব্যক্তিগত সময় বলে আর কিছুই প্রায় থাকছে না, সে কারণে মানসিক এবং শারীরিক অবসাদ গ্রাস করছে তাঁকে! যদিও সম্প্রতি যে সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়েছে জোহানস গুটেনবার্গ ইউনিভার্সিটি মাইনজ-এর তরফে, তার সিদ্ধান্তপত্রের গবেষক অধ্যাপক ক্রিশ্চিয়ান ডোরম্যান আলোকপাত করছেন সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে। তিনি বলছেন যে মানসিক এবং শারীরিক অবসাদের কারণেই কর্মীদের কাজে উৎসাহ থাকছে না! সত্যি বলতে কী, এ কথা অস্বীকার করা যায় না যে এই দুই বিষয় খুব নিবিড় ভাবে পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একটা অপরকে নিঃসন্দেহেই প্রভাবিত করে। অতএব যদি অধ্যাপক ডোরম্যানের তত্ত্ব ধরে এগোতে হয়, তা হলে এক বিষাক্ত বৃত্তের সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। মানসিক এবং শারীরিক অবসাদ, তা থেকে কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলা, পরিণামে চাকুরিগত উদ্বেগ তৈরি হওয়া, তা থেকে বেড়ে চলা মানসিক এবং শারীরিক অবসাদ- এই চক্রের হাত থেকে যেন কিছুতেই নিস্তার নেই! অধ্যাপক ডোরম্যান তাঁর এই সমীক্ষা পরিচালনা করেছেন ২৬ হাজার ৩১৯ জন কর্মীর উপরে। এঁদের গড় বয়স ৪২ বছর। দেখা গিয়েছে যে এই কর্মীদের মধ্যে যাঁরা খুব তীব্র ভাবে মানসিক এবং শারীরিক অবসাদের শিকার, তাঁদের ৪২ শতাংশ পুরুষ। নারীদের ক্ষেত্রে এর মাত্রা আরও বেশি, কেন না তাঁদের অফিসের পাশাপাশি ঘরও সামলাতে হয়। অধ্যাপক ডোরম্যান এ ক্ষেত্রে অনেক বছর ধরে চলা মানসিক অবসাদের দিকেই প্রাথমিক ভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন। মনোবিদ্যা স্পষ্টতই জানায় যে আমাদের সবার মধ্যেই কোনও না কারণে মানসিক অবসাদ তৈরি হয়। কেউ সেটার সঙ্গে সহজেই লড়তে পারেন, কেউ পারেন না! যাঁরা পারেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা বছরের পর বছর জমতে থাকে। মন এবং শরীর যেহেতু পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেহেতু মানসিক অবসাদ থেকে জন্ম নেয় শারীরিক ক্লান্তিও। আর এরই জেরে কর্মীদের কাজে মন বসছে না। কাজের পরিমাণ যেমনই হোক না কেন, তা তাঁদের এক বিপুল বোঝা বলে মনে হচ্ছে। খুব সামান্য কোনও সমস্যাকেও মনে হচ্ছে অনতিক্রম্য বাধা! পরিণামে তাঁরা কাজের জগতে ফিরতে চাইছেন না। যা আর্থিক দিক থেকে তাঁদের দুর্বল করে তুলছে। আর কাজ চালিয়ে গেলেও মেজাজ ঠিক থাকছে না যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সাংসারিক জীবনে। অধ্যাপক ডোরম্যানের বক্তব্য- এই সমস্যার একমাত্র সমাধান রয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থার হাতে। তাঁরা যদি কর্মীদের সঙ্গে সহানুভূতিপূর্ণ ব্যবহার করেন, কর্মক্ষেত্রে তাঁদের স্বাধীনতা দেন, সে ক্ষেত্রে একটু হলেও পরিস্থিতি ভালোর দিকে যেতে পারে!