Bibek Ray Chaudhuri from Singapore
#সিঙ্গাপুর: গত ৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে রয়েছি সিঙ্গাপুরে ৷ চাকরি থেকে শুরু করে থাকা, খাওয়া-দাওয়া, কোনও কিছুতেই কোনও সমস্যা কোনওদিন হয়নি ৷ বলা যায়, সিঙ্গাপুরের সুযোগ-সুবিধা দেখে কখনও মনেও হয়নি যে এ দেশে কোনও সমস্যা হতেও পারে ৷ কিন্তু খারাপ দিন সত্যি আসে ৷
গোটা বিশ্বের পরিস্থিতিই এখন ভয়ানক ৷ সিঙ্গাপুরের মানুষ হয়তো এতদিন COVID-19-এর ভয়াবহতা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না ৷ গত ৭ এপ্রিল থেকে এ দেশ পুরোপুরি লকডাউনে ৷ স্কুল-কলেজ বন্ধ হল ৮ এপ্রিল থেকে ৷ অফিসগুলিতে চালু ওয়ার্ক ফ্রম হোমও ৷ আমি নিজে এখানে শিক্ষকতার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত ৷ আমরা সবাই এতদিন ভাবছিলাম, যেখানে গোটা পৃথিবী প্রায় লকডাউনে ৷ তাহলে এখানে সেটা করা হচ্ছে না কেন ৷ ওয়ার্ক ফ্রম হোম কেন চালু হচ্ছে না ? স্কুলগুলি কেন বন্ধ করা হচ্ছে না ? শেষপর্যন্ত সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী Lee Hsien Loong-এর ভাষণে বোঝা গেল আসল কারণটা ৷
আসলে এখানকার স্কুলগুলি এতদিন বন্ধ করা হয়নি, কারণ তাহলে বাচ্চাদের প্রত্যেককেই বাড়িতে একা থাকতে হবে ৷ বাচ্চাদের মা-বাবা-রা যে প্রায় প্রত্যেকেই কোথাও না কোথাও কর্মরত এ দেশে ৷ তাদের শিশুদের খেয়াল রাখবে কে ? স্কুলই বাচ্চাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা ৷ সেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তত্ত্বাবধানে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীরাই ভাল থাকবে ৷ কিন্তু গত কয়েকদিনে সিঙ্গাপুরে কোভিড-১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি সংখ্যায় বেড়ে গিয়েছে ৷ আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন অনেক ভারতীয়ও ৷ সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত সেদেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারের কাছাকাছি ৷ গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১০৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন ৷ লকডাউন চালু হওয়ার পরেও বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা ৷
স্কুলগুলিতে এতদিন ধরে সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং মেনে চলার পাঠ ভালমতোই দেওয়া হচ্ছিল শিক্ষার্থীদের ৷ ক্লাসরুম এবং ক্যান্টিনে নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখেই বসানো হচ্ছিল প্রত্যেককে ৷ দিনে দু’বার পড়ুয়াদের শরীরের তাপমাত্রা চেক করার পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার-সাবানের ব্যবহার, নিজের ডেস্ক এবং বসার জায়গা পরিষ্কার করা ইত্যাদি অনেক কিছুই পড়ুয়াদের করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল ৷ যারা সিঙ্গাপুরের বাইরে কোথাও গিয়েছিল, তাদেরকে দু’সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইনেও রাখা হচ্ছিল ৷ বিভিন্ন অফিসে একদিন অন্তর ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ব্যবস্থাও চালু হল ৷ বন্ধ করা হল সিনেমা হল, লাউঞ্জ বার, নাইট ক্লাবের মতো বিনোদনের অনেক জায়গাই ৷ কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান না দেখে শেষপর্যন্ত পুরোপুরি লকডাউনে যেতে বাধ্য হল সিঙ্গাপুর সরকার ৷
অনেকেই লকডাউনের নিয়ম ভাঙছিলেন ৷ কোনও কারণ ছাড়াই রাস্তায় বেরিয়ে জটলা করা বা ভিড় জমাচ্ছিলেন ৷ তাই লকডাউন ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না সরকারের ৷ স্কুলগুলিতে চালু হল অনলাইন পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা ৷ তার জন্য যা যা প্রয়োজন লকডাউনের আগের দিনই ঝাঁপিয়ে পড়ে গিয়ে কিনে আনলাম দোকান থেকে ৷ সঙ্গে অন্তত দু’সপ্তাহের খাবার-দাবার ৷ জুরং ওয়েস্ট বলে একটি জায়গায় একা থাকি আমি একটি অ্যাপার্টমেন্টে ৷ এখানে আমার অনেক বন্ধু, অফিস কলিগ রয়েছেন কলকাতার ৷ তাদের সবার বাড়ি অবশ্য বেশ অনেকটাই দূরে ৷ তাই লকডাউনে সবার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ভিডিও কলিং এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া ৷ স্কুলে অনলাইন পঠন-পাঠন বা ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালুর পরেও অবশ্য কাজের চাপ কিছুই কমেনি, বরং বেড়েছে ৷ কিন্তু তাও সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতেই হয় ৷ যাতে আমাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত থাকে ৷ আশা করি নিজেদের সাধারণ লাইফস্টাইলে খুব তাড়াতাড়ি আবার ফিরে যেতে পারব ৷
কলকাতায় একা থাকা আমার বাবার জন্যও খুব চিন্তা হয় ৷ বাবা বাড়িতেই থাকছেন ৷ রিটায়রমেন্টের পরেও যে মানুষ বাইরে না বেরিয়ে থাকতে পারেন না ৷ তাঁর পক্ষে বাড়িতে নিজেকে এতদিন আটকে রাখাটা খুবই কঠিন কাজ ৷ কিন্তু সময়টা যে সহজ নয় ৷ তাই নিয়ম মেনে কোনওরকমে নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছেন আমার বাবা ৷ আর তার উপর আমায় নিয়ে চিন্তা তো রয়েছেই ৷ এতদিন চিন্তা ছিল কেন আমার স্কুল বন্ধ হচ্ছে না ৷ সিঙ্গাপুরে লকডাউন চালুর পরে কিছুটা শান্তি পেয়েছে ৷ কিন্তু তাও টেনশন তো আর কমে না ৷ একবার যদি ফোনে কথা বলতে গিয়ে হাঁচি বা কাশি হয় আমার, ব্যাস! তারপর পুরো সময়টা বাবাকে এটা বোঝাতেই লেগে যায়, যে আমি সুস্থ আছি ৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Coronavirus, Singapore