#কলকাতা: কলকাতা্র করোনার আতঙ্কে শহর আরও একবার দেখল অমানবিক মুখ। ৭০ বছরের বৃদ্ধের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল পরিচিতরা। গত তিন দিন ধরে রাস্তায় পড়ে ছিলেন ওই বৃদ্ধ। এই খবর বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে খোকন পাল নামক ওই প্রৌঢ় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।
শোভাবাজারের খোকন পাল কাজ করতেন স্থানীয় একটি ডেকরেটরের দোকানে। আর রাতে থাকতেন পাশের একটি মন্দিরে। তার নিজের ভাই থাকলেও তাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। ফলে বলা চলে এক প্রকার নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতেন খোকন পাল। দিন পাঁচেক আগে তার জ্বর আসে। সঙ্গে শুরু হয় কাশিও। যে দোকানে তিনি কাজ করতেন সেখান থেকে তাকে কাজে যেতে বারণ করা হয়। প্রথম দুদিন মন্দিরেই কেটেছে তার। কিন্তু জ্বর না কমায় তৃতীয় দিন তাকে মন্দির থেকেও চলে যেতে বলা হয়।
বাধ্য হয়ে খোকন বাবু ফুটপাতে আশ্রয় নেন। প্রথম দুদিন এলাকায় হেঁটে চলে বেড়ালেও রবিবার সকাল থেকে তা বন্ধ হয়ে যায়। শোভাবাজারের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সামনে তাকে অস্বাভাবিক অবস্থায় বসে থাকতে দেখে এলাকাবাসী। শরীরে চলাফেরার কোনও ক্ষমতা ছিল না । দু'একজন এগিয়ে এসে কিছু খাবার দিলেও তা খেতে পারছিলেন না খোকন বাবু। সকলের সন্দেহ হয়, করোনাভাইরাস থাবা বসিয়েছে তার শরীরে। কিন্তু কেউ এগিয়ে এসে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি খোকন বাবুর।
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই মন্ত্রী সাধন পান্ডের মাধ্যমে খবর যায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে। রবিবার বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে অ্যাম্বুলেন্সে খোকন পালকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফ থেকে রূপশ্রী রায় বলেন, 'জ্বর হলেই যে করোনা হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ফলে খোকন বাবুর করোনা হয়েছে কিনা এখনও কেউ জানে না। তাই অকারণে আতঙ্কিত হয়ে এইভাবে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়।' স্থানীয় বাসিন্দা সুমিত মজুমদার বলেন, 'আমরা সকাল থেকে অনেককেই বলেছি, কিন্তু কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।' এখানেই প্রশ্ন উঠছে শহরের মানবিক মুখ নিয়ে। একজন প্রৌঢ় তিন দিন ধরে রাস্তায় পড়ে রইলেন, আর কেউ তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এল না।
Soujan Mondal