ERON ROY BURMAN
#কলকাতা: পরিযায়ী শ্রমিকদের যেন হেঁটে চলাটাই একমাত্র পথ। বিরামহীন হেঁটে চলা। গন্তব্য বহুদূর। আর ততটাই অনিশ্চিত তাঁদের ভবিষ্যৎ। কলকাতা থেকে ওড়িশার বাড়ির পথে এমন একদল নির্মাণ শ্রমিকের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল নিউজ18 বাংলার।
লকডাউনের দুপুর। ময়দানের ভিতর ট্রামলাইন। সেই লাইনেরই দখল নিয়েছেন একদল মানুষ। ভিন রাজ্যের পরিযায়ী মানুষ। লকডাউনের শহরে তাঁদের মাথায় ব্যাগ, কাঁধে ঝোলা। কোথায় চলেছেন? ময়দানের ট্রামলাইন ধরে? কয়েক মুহুর্তের জন্য দাঁড়িয়ে কথা বলে জানা গেল সবটাই। একদিন কাজের খোঁজে ওড়িশা থেকে এসেছিলেন কলকাতায়। শুধু কাজের খোঁজে। পেয়েও গিয়েছিলেন। প্রত্যেকেই যুক্ত হয়েছিলেন নির্মাণ কাজের সঙ্গে। মোটামুটি সব ঠিকঠাক চলে যাচ্ছিল। কিন্তু করোনার জেরে লকডাউন সবকিছু এক নিমেষে যেন কেড়ে নিয়েছে। কাজ বন্ধ, রোজগারও নেই। কিছুদিন খাবার ও থাকার জায়গা পাওয়া গিয়েছিল। তারপর সব শেষ। মালিকও হাত তুলে নিয়েছেন।
ওড়িশাগামী সেই দলের এক শ্রমিক জানালেন, "একমাস মালিক খরচ দিয়েছিল। তবে বলে দিয়েছে আর খরচ দেওয়া সম্ভব নয়। রাখাও সম্ভব না। তাই আর কোনও উপায় না দেখে বেরিয়ে পড়েছি বাড়ির উদ্দেশ্যে। পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরব।" কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বর। অনেকটা পথ। প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। সরকার শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন চালালেও পরিযায়ীরা ওসব জানেন না। হাতে টাকা পয়সাও নেই। তাই বাধ্য হয়েই হেঁটে চলা। হাঁটতে হাঁটতেই এক মহিলা পরিযায়ী শ্রমিক জানালেন, "একটা টাকা নেই। ট্রেনের টিকিট কাটবো কেমন করে। অনলাইনে কী করে কাটতে হয় তাও জানিনা। সবাই মিলে তাই পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছি। আসলে গরিবদের জন্য কেউ থাকেনা। কষ্ট হলেও ফিরতে হবে।"
রাস্তায় পুলিশ বাধা দিলেও ওঁরা মানতে নারাজ। হেঁটেই বাড়ি ফিরবেন। কবে ফিরবেন জানেন না। তবে যত কষ্টই হোক নিজের ভিটেমাটিতে ফিরতেই হবে। কারণ ভুখা পেটে থাকতে হলেও নিশ্চিন্ত আশ্রয়টা তো কেউ কাড়তে পারবে না।