#মহিষাদল: জিনিসপত্র ফেরি করেই আয়। কিন্তু করোনার লকডাউনের কারণে বেকার হয়ে পড়েছেন মহিষাদলের ফেরিওয়ালাদের বয়স্ক মুখ গঙ্গাধর সামন্ত। আয় নেই ৮০ বছরের গঙ্গাধরবাবুর। তাই ঠাঁইও নেই তাঁর নিজের বাড়িতেই!
নিজের সংসারে নিজের ছেলে বৌমার কাছে ব্রাত্য হয়ে পড়া ৮০বছরের পঙ্গু মানুষটির এখন জায়গা হয়েছে রাজবাড়ির এক ভাঙাচোরা এক ঘুপচি এক দালানের পাশে! যেখানে প্রায় না খেয়েই কোনমতে দিন কাটছে তাঁর।
নিজের তৈরি করা বাড়িতে থাকার জন্য ঘরভাড়া দিতে হবেনা ঠিকই। কিন্তু দুপুর আর রাতে নিজের বাড়িতেই খাওয়ার জন্য ছেলে বৌমার হাতে মিল খরচ বাবদ প্রতিদিন চল্লিশ টাকা তুলে দেওয়ার নিয়ম যেখানে চালু রয়েছে। সেখানে বৃদ্ধ হকার বাবার জন্য এই নিয়ম চালু রেখেছে নিজের ছেলে-বৌমাই। ছেলের চালু করা নিয়ম মেনে বছরের পর মিল খরচের টাকা দিয়েই খাওয়াদাওয়া করতেন গঙ্গাধর সামন্ত। কিন্তু লকডাউনের কঠিন সময়ে যখন বাজার হাট স্কুল কলেজ বন্ধ, তখন নিজের হকারিও বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন বৃদ্ধ গঙ্গাধর। আশি বছরের পঙ্গু বৃদ্ধের তাই এখন ঠাঁই হয়েছে ভাঙাচোরা দালানের ঘুপচি দাওয়ায়!
খিদে মেটাতে রাজবাড়ির কুলদেবতার মন্দিরের এক বেলার ভোগই ভরসা তাঁর। যদিও মন্দির থেকে প্রতিদিন ভোগলাভ হচ্ছে না। তখন উপায় বলতে পথচলতি লোকের দেওয়া খাবারই ভরসা হয়ে ওঠে! যদিও তাও প্রতিদিন তাঁর কপালে জোটেনা।
পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের গঙ্গাধর সামন্তর এই করুন কাহিনী সকলকেই কাঁদায়, কাঁদায় না তাঁর হৃদয়হীন সন্তানদের। জীবনের সমস্ত স্বাদ আহ্লাদকে বিসর্জন দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় হকারি করে ছেলে মেয়েদের মানুষ করার কাজে নিজেকে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। পরপর দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তাঁরা আছে স্বামীর বাড়ি। বৃদ্ধ ভেবেছিলেন, ছেলে বৌমা নাতি নাতনিদের নিয়ে বাকি জীবনটা আনন্দেই কাটিয়ে দেবেন। কিন্তু ছেলে নিজের বৃদ্ধ পিতাকে বড় উপহার দিয়েছে। ছেলের ফরমান, সংসারে থাকতে গেকে, খেতে হলে রোজ দিতে হবে চল্লিশ টাকা!
বৃদ্ধের কথায়, 'মিল চার্জ বেড়ে কুড়ি থেকে বেড়ে এখন চল্লিশ টাকা।দিতে পারি না, তাই ঘরে ঠাঁই নাই।'
আগে খাই-খরচ চালাতে দিশেহারা বৃদ্ধ মাথায় আইসক্রিম এর বাক্স আর হাতে চকলেট এর ব্যাগ নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের সামনে রাস্তার মোড়ে হাঁক পাড়তেন - আাইসক্রিম নাও, চকলেট নাও। দুপুরের খাবার বলতে কোনও কোনও স্কুলের কিছু শিক্ষক শিক্ষিকাদের দেওয়া মিড ডে মিলের রান্না। কিংবা রাস্তার পাশে কেনও অনুষ্ঠান বাড়ির খাবার। রোদ বৃষ্টিও তাঁর কাছে ফিকে! তাঁকে যে রোজগার করতেই হবে। না হলে যে ছেলের কাছে রাতের খাবার জুটবে না।করোনা লকডাউন আর আমফানের প্রভাবে রাস্তাঘাট গত দুমাসেরও বেশি সময় ধরে জনমানব শূন্য। স্কুল, কলেজে তালা। আইসক্রিম নাও চকলেট নাও- ওই ডাকও এখন তাই বন্ধ। রোজগারহীন, তাই খাবার বন্ধের সাথে সাথে বাড়ির দরজাটাও বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর অভিযোগ, ছেলে কোনও দিন তাঁর খোঁজও নেয়নি।
SUJIT BHOWMIK