#কলকাতা: করোনা আতঙ্কের মাঝেও আশার আলো দেখাচ্ছে বাংলা ৷ রাজ্যে সুস্থতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০.৪ শতাংশ ৷ তাঁদের মধ্যেও অন্তত ৮৮ শতাংশের কো-মরবিডে মৃত্যু হচ্ছে। অন্যদিকে, মৃত্যুর হার কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২ শতাংশে ৷ বেড়েছে ডিসচার্জ রেটও ৷ বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ একইসঙ্গে এর পুরো কৃতিত্বই দিলেন রাজ্যের কোভিড ওয়ারির্য়াসদের ৷
তবুও রাজ্যে সংক্রমণের হার প্রতিদিনই বাড়ছে এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকার সতর্কতামূলক সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। টেস্ট বেড়েছে বলেই আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। এতে ভয়ের কিছু নেই ৷ অযথা আতঙ্কিত হবেন না ৷’ বেশি বেশি টেস্ট করে দ্রুত সংক্রমিতকে খুঁজে বের করে ট্রিটমেন্ট করাই রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যসচিব জানালেন, রাজ্যে কোভিড হাসপাতালের বেড বাড়িয়ে করা হয়েছে ১১,৫৬০। রাজ্যে রোজ ২৫ হাজারের বেশি টেস্টিং করা হচ্ছে। এখনও রাজ্যে করোনায় সঙ্কটজনক অবস্থায় রয়েছে ১১৪৪ জন আক্রান্ত। এখনও পর্যন্ত কো মর্বিডিটিতে মৃত্যু হয়েছে ৮৭ শতাংশের বেশি আক্রান্তের। রাজ্যে করোনায় মৃত্যুর হার রয়েছে ২.২ শতাংশ। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট ১০ লক্ষ ২৫ হাজার করোনা টেস্ট করা হয়েছে। রাজ্যে বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেওয়া হয়েছে ৭২ হাজার ১৫৮ জনকে। আগেই চালু হয়েছে প্লাজমা ব্যাংক। এবার কর্ড ব্লাড ব্যাংককেও কাজে লাগানোর কথা ভাবছে প্রশাসন। উ্ল্লেখ্য, এর আগেই রাজ্য সরকার মাল্টিপারপাস একটি কোভিড হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সপ্তাহে ৭দিনই ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে এই হেল্পলাইন। নম্বরটি হল 1800313444222 ৷ এখানে করোনা সংক্রান্ত যে কোনও ওষুধ, রাতবিরেতে অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া, সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে সমস্যা হলে এই নম্বরে ফোন করে জানানো যাবে। যে কোনও সময়ই মানুষ ফোন করে এই নম্বর থেকে সাহায্য পাবেন।
এছাড়া এদিন করোনা পরীক্ষা করা নিয়ে ভুয়ো ব্যবসা করছে যাঁরা, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও সতর্ক হতে বলেন। তিনি জানান, কোভিড পরীক্ষার নামে কোথাও যাতে প্রতারণা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবে রাজ্য সরকার। এছাড়া, সাধারণ মানুষকেও তিনি সতর্ক করে বলে, হোম কালেকশনের নামে যে কেউ এলেই তাঁর কাছে করোনা পরীক্ষা করানোর নামে টাকা খরচ করবেন না। সরকারি শিলমোহর না থাকলে করোনা পরীক্ষা করা যায় না, সেটাও তিনি বলেন এদিন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড পরীক্ষার নামে প্রতারণা নয় ৷ স্বীকৃত ল্যাব ছাড়া পরীক্ষা করাবেন না ৷’
পাশাপাশি, মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন যাতে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশাসন স্বীকৃত ল্যাবের একটা তালিকা থাকে। কেউ ভুয়ো করোনা পরীক্ষা করতে এলে যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন। রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা থেকে শুরু করে, বেশি বেশি করে টেস্টিং ও ট্রেসিংয়ের ওপর জোর দেওয়ার বিষয়টিও এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি সাহায্যের জন্য সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনেকেই আছেন যারা নিজের ইচ্ছেতেই সমাজসেবা, স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করতে চান ৷ রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারাও কাজ করতে পারেন ৷ একা থাকেন যেসব বৃদ্ধ দম্পতি বা নিঃসঙ্গ প্রবীণ মানুষদের জন্য বিশেষ হেল্পলাইন চালুর কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ একইসঙ্গে বৃদ্ধ নিঃসঙ্গ নাগরিকদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসতে প্রতিবেশীদেরও অনুরোধ জানান তিনি ৷ আবাসনগুলিতে বিশেষ কমিটি গড়ার ব্যাপারেও খোঁজ নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেন তিনি ৷
সাংবাদিক বৈঠকের শেষের দিকে আলাদা করে বলে সাংবাদিকদের কথাও। তাঁদেরও নিরাপদে থাকতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আগাগোড়া একটা বার্তাই দিয়ে এসেছেন আজকের বৈঠকে, ‘ভয় পেলে হবে না। অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন ঠিকই, তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তাই ভয় পাবেন না। রাজ্য সরকার সঙ্গে আছে।’