#কলকাতা: একদিকে প্রায় দু'মাস ধরে চলছে লকডাউন আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। করোনার দাপটে কলকাতার একাধিক হাসপাতাল আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতেও হয়েছে৷ এরই মাঝে কলকাতা সহ রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে নতুন সঙ্কট হয়ে দেখা দিতে পারে নার্সদের অভাব। কারণ বৃহস্পতিবারই আচমকা কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতাল, নার্সিং হোমের চাকরি ছেড়ে মণিপুর ফিরে গিয়েছেন ১৮৫ জন নার্স৷ মণিপুর সরকারের উদ্যোগেই তাঁরা ফিরেছেন বলে খবর৷ উত্তর- পূর্ব রাজ্যের অন্যান্য রাজ্যগুলিও একই পথে হাঁটতে পারে বলে খবর৷
মূলত কলকাতার বিভিন্ন বড় বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমগুলি উত্তর - পূর্বের রাজ্যগুলির নার্সদের উপর বিশেষ ভাবে নির্ভরশীল। আমরি, ফর্টিস, আর এন টেগোর, পিয়ারলেস, মেডিকার মতো বড় হাসপাতালগুলিতে সহ মণিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশের নার্সদের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। এছাড়াও ওড়িশা এবং ত্রিপুরা থেকে আসা নার্সদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
বৃহস্পতিবার থেকে হঠাৎ কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমগুলিতে নার্সের সঙ্কট দেখা দিয়েছে৷ কারণ মণিপুর সরকার কলকাতায় কর্মরত তাদের ১৮৫ জন নার্সকে নিজেদের রাজ্যে ফেরত নেওয়ার উদ্যোগ নেয়৷ মণিপুর সরকারই নার্সদের সড়কপথে ফেরাতে বাস পাঠিয়ে দেয়৷ সেই মতো মণিপুরের নার্সরা কলকাতায় চাকরি ছেড়ে তাঁদের নিজের রাজ্যে ফিরে যান। এর ফলে তীব্র সমস্যায় পরে বেসরকারি হাসপাতাল নার্সিং হোমগুলি।সূত্রের খবর, কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতাল, নার্সিংহোমের থেকে অনেক বেশি টাকা বেতনের টোপ দিয়ে এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার আশ্বাস দিয়ে এই নার্সদের ফেরানো হয়েছে৷
বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষগুলির আশঙ্কা, এর পর ধাপে ধাপে মণিপুর সরকার কলকাতায় কর্মরত তাদের রাজ্যের আরো নার্সকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। একই পথে হেঁটে ওড়িশাএবং ত্রিপুরা সরকারও তাদের রাজ্যের নার্সদের এ রাজ্য থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে খবর। সম্ভবত মিজোরাম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ সরকারও তাদের রাজ্যের নার্সদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নিজেদের রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরো মজবুত করার জন্য অনেক বেশি মাইনে দিয়ে, এমনকী বিনামূল্যে খাবার, বাসস্থানের মতো সুযোগ সুবিধা দিয়ে কলকাতায় কর্মরত নার্সদের ফেরানো হচ্ছে বলে খবর। পাশাপাশি কলকাতায় কাজ করলে ওই নার্সদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও অনেক বেশি বলে মত সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলির৷ কারণ উত্তর- পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে করোনার প্রকোপ পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অনেকটাই কম৷
রাজ্যে নার্সিং কলেজ অনেক কম হওয়ায় প্রতিবছর যে পরিমাণে নার্স পাশ করে বের হন, তাতে রাজ্যের বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যত নার্স লাগে, তা পূরণ হয় না। ফলে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল, ওড়িশা, দক্ষিণ ভারতের নার্সের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। আমরি হাসপাতাল এর সিইও রূপক বড়ুয়া জানিয়েছেন, 'যেভাবে মণিপুর সরকার তাদের নার্সদের ফিরিয়ে নিয়ে গেল, তাতে এই কঠিন সময়ে আমরা তীব্র সমস্যার মুখে পড়ব৷ এছাড়াও ওড়িশা, ত্রিপুরা, মিজোরাম সরকারও তাদের নার্সদের ফিরিয়ে নেবে বলে শুনছি। এর ফলে আমাদের খুব সমস্যার মুখে পড়তে হবে।'
সূত্রের খবর, এখনো পর্যন্ত পিয়ারলেস হাসপাতালের ২৫ জন, আর এন টেগোর হাসপাতালের ১০ জন, মেডিকা হাসপাতালের ৩ জন, গাঙ্গুলিবাগান আইরিশ হাসপাতালের ১১ জন, আমরি হাসপাতালের ৭ জন, অ্যাপোলো হাসপাতালের ১০ জন, ফর্টিশ হাসপাতালের ১৬ জন, চার্ণক হাসপাতালের ২৭ জন, যোধপুর পার্ক ইইডিএফ হাসপাতালের ১০ জন, জেনেসিস হাসপাতালের ৫ জন, রুবি হাসপাতালের ১২ জন, মল্লিকবাজারের নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের ৭ জন এবং অ্যাপেক্স হাসপাতালের ৪ জন নার্স ফিরে গিয়েছেন৷এছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমে কর্মরত মণিপুরের নার্সরা ফিরে গিয়েছেন৷
AVIJIT CHANDA
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Coronavirus