#কলকাতা: ইতিমধ্যে এ বিষয়ে যা কিছু সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে, তা স্পষ্ট জানান দিয়েছে যে করোনাভাইরাসের (Coronavirus) সঙ্গে মানসিক অবসাদের সম্পর্ক যথেষ্টই নিবিড়। এই মারণ ভাইরাসের প্রভাবে যে মানসিক সমস্যা হচ্ছে সরাসরি, এমনটা নয়। কিন্তু করোনার দৌরাত্ম্যে সারা বিশ্বে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা অনেক মানুষকেই সুস্থির থাকতে দেয়নি। স্পষ্ট করে বললে, করোনার হাত ধরে মানসিক সমস্যা, অবসাদ এই সব কিছুর নেপথ্যে কাজ করে চলেছে সামাজিক পরিকাঠামো এবং অর্থনীতি।
এ বিষয়ে কলকাতার রাশির কথাই ধরা যায়! তিনি জানিয়েছেন যে ২০২০ সালের লকডাউন মানসিক দিক থেকে তাঁকে রীতিমতো বিধ্বস্ত করে তুলেছিল। তিনি একাকিত্ববোধে ভুগছিলেন। দারুণ দুশ্চিন্তা ছিল কাজ নিয়েও। ভবিষ্যতে কাজ হারাতে হতে পারে, এই দুর্ভাবনায় তাঁর শরীরও খারাপ করে। কিন্তু চাইলেও কোনও মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। কারণ বেশিরভাগ চেম্বারই ছিল বন্ধ। আর অনলাইনে খরচটা এতটাই বেশি যে ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁকে পিছিয়ে আসতে হয়েছিল!
একই রকম অবস্থার কথা জানিয়েছেন দিল্লির আইটি প্রফেশনাল মেঘা। ছোট থেকেই বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভোগেন তিনি। কিন্তু লকডাউনে সেশন পিছু ১৫০০ টাকা খরচ করে মনোবিদের পরামর্শ নেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে গিয়েছিলেন তিনিও। আর এখানেই বিপদসঙ্কেত জারি করছেন ট্রমা থেরাপিস্ট রুচিতা চন্দ্রশেখর। তিনি জানাচ্ছেন যে, মধ্যবিত্তর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা করোনা সংক্রমণের জেরে অনেকটা হলেও তলানিতে এসে ঠেকেছে। ফলে, চাইলেও টাকা খরচ করে মানসিক চিকিৎসা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। পাশাপাশি, একটি পরিসংখ্যানের দিকেও আঙুল তুলেছেন রুচিতা। বলছেন যে ভারতে প্রতি ১০ হাজার মানসিক অবসাদগ্রস্ত রোগীর ক্ষেত্রে মনোবিদের অনুপাত মাত্র ১!
একই সঙ্গে আরও একটা বিষয় মাথায় না রাখলেই নয়। এর আগে এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল যে ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে করোনাকালে মানসিক রোগ চিকিৎসার ওষুধও পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছচ্ছে না। ২০২০ সাল আমরা পেরিয়ে এসেছি ঠিকই, কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনও বেশ নড়বড়ে। করোনার ভ্যাকসিন বাজারে এসে গেলেও নতুন স্ট্রেইনের রেশ এ দেশেও এসে পৌঁছেছে। সব মিলিয়ে, ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চয়তায় ভরা! এমন পরিস্থিতিতে ২০২১ সালে দেশের মানসিক অবসাদ কোন পর্যায়ে থাকে, তা নিয়ে আপাতত নানা সন্দেহের মুখোমুখি হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই বলেই জানাচ্ছেন মনোবিদরা!