#লন্ডন: মারণ ভাইরাস করোনায় এখন গোটা বিশ্বজুড়েই মৃত্যুমিছিল অব্যাহত ৷ লকডাউনে প্রায় গোটা বিশ্ব ৷ খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে সকলকেই বারণ করা হচ্ছে ৷ কিন্তু এমনও অনেক মানুষ রয়েছেন, যাদের বাড়ির বাইরে বেরোতেই হবে ৷ সবার আগেই যাদের নাম উল্লেখ করতে হয়, তারা হলেন চিকিৎসক এবং হাসপাতালের কর্মীরা ৷ যারা করোনা যুদ্ধে সবার সামনে থেকে লড়াই করছেন ৷ যে কোনও সময় বিপদ ঘটে যেতে পারে জেনেও রোগীদের সেবায় সর্বক্ষণ রয়েছেন তাঁরা ৷ ব্রিটেনের এক নার্স আইসিইউ-তে থাকা এক করোনা রোগীর বিবরণ দিয়েছেন ৷ পিপিই পোশাক পরেই করোনা আক্রান্তের সঙ্গে সেলফি পোস্ট করে ফেসবুকে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি ৷
তিনি লিখেছেন, যেদিন থেকে আমাদের দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে লাগল, আমি ইন্টারনেটে বিভিন্ন লেখা পড়ে দেখলাম, কিভাবে নিজেকে আরো সুরক্ষিত রাখা যায় সে ব্যাপারে। কারণ একজন আইসিইউ নার্স হিসেবে আমার সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। আমি মানসিকভাবেও প্রস্তুত হতে থাকি। পিপিই যেভাবে পরা দরকার, নিয়ম মেনে সেটাও করছি। তবে এখানে কাজ করতে এসে এর আগে কখনও এতোটা ভয় পাইনি। করোনা আক্রান্ত রোগীরা স্বাভাবিক নয়। সাধারণ মানুষের মতো কোনও আচরণ তারা করে না। আর এই অস্বাভাবিক আচরণ তাদের যায় না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের রিপোর্ট করোনা নেগেটিভ প্রমাণিত হয়। ছবিতে আমাকে যে পিপিই পরে থাকতে দেখছেন, করোনা আক্রান্ত রোগী এই পরিস্থিতিতে সাধারণত কোনও মানুষকে দেখছে। যখন আমরা থাকছি না, তখন রোগী একাই থাকছে। সে কারণে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে করোনা রোগীরা নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত স্বাভাবিক আচরণ করতে পারছে না। আমার হৃদয় মর্মাহত। খুব খারাপ লাগছে এই রোগীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে। সেই সঙ্গে তাদের চোখেমুখে সারাক্ষণ একটা উৎকণ্ঠা লক্ষ করছি। রোগীদের পরিবারের লোকজনকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার তাদেরকে লাইফসাপোর্টে নেওয়া হলেও আরেক ধরনের উদ্বেগ কাজ করছে। এই দুঃসময় মানসিক শক্তি অনেক বেশি দরকার। কিন্তু করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেই মানসিক শক্তি নিজের থেকেই তৈরি করে নিতে হচ্ছে। আর তাকে এতে সহায়তা করছে নার্স ও ডাক্তাররা। হাসপাতালের সব কর্মীরাই করোনা আক্রান্ত রোগীদের কেবিনে প্রবেশ করতেই এক ধরনের ভয় পাচ্ছে। আমি এবং আমার সহকর্মীরা ক্লান্ত। আমাদের মধ্যেও ভয় কাজ করছে। তার পরেও আমরা এই সঙ্কটের মধ্যে কাজ করে যাব। পরিস্থিতি নির্বিশেষে আমরা প্রতিটা দিনই রোগীদের জন্য লড়াই করব। তবে দয়া করে বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হয়ে নিজে এবং অন্যদের আক্রান্ত করে আমাদের লড়াইকে আরও কঠিন করে তুলবেন না।