#কলকাতা: সোনা ধরা হাতে আজ আদা, রসুন, পেঁয়াজ। রত্ন চেনার চোখ খোঁজে আজ আলু, আদার বস্তায় লক্ষ্মীলাভ! সোনা, রুপো গয়নায় শান দেওয়া হাতকে বদলে দিয়েছে করোনা। বলা ভালো, লকডাউনে পেটে'র ক্ষিদে তা করতে বাধ্য করেছে। বিশ্বমারি করোনা দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে সভ্যতার সংজ্ঞা। অর্থনীতিতে কাঁপুনি এনে জীবন ও জীবিকার সংশয় তৈরি করে চলেছে অনবরত। কাজ হারানোর আশঙ্কা ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে লকডাউন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে । কলকাতার এক টুকরো ছবি লকডাউনের বেসামাল অর্থ নীতির চেহারাটা আরও প্রকট করে দিল।
এ যেন ছিল বিড়াল। হল রুমাল। ছিল সোনার দোকান। হল আলু পিয়াজ আদা রসুনের দোকান। এটাই হয়তো লকডাউনের প্রাপ্তি। 35/1 এ বাগবাজার স্ট্রিট। উত্তর কলকাতার এই ঠিকানায় পরিচিত পুরোন অলংকার দোকান। যত না গয়না বিক্রি হয়, তার থেকে ঢের বেশি তৈরি হতএই দোকানে। কিন্তু করোনা সবকিছু ওলট-পালট করে দিল। সেই বাইশে মার্চ। জনতা কারফিউয়ের পর থেকে বন্ধ দোকান। তারপর লকডাউন। প্রথম দুই পর্যায়ে রসদ খরচ করে অন্নসংস্থান হলেও তৃতীয় পর্যায়ে আর সম্ভব হয়নি। তারপর সোনার দোকানেই আলু-পিয়াজ-আদা-রসুনের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করতে শুরু করেছেন যুগল দাস বিশ্বাস।উত্তর কলকাতার বাগবাজার স্ট্রিটের পুরনো গয়নার দোকান বিশ্বাস জুয়েলার্স। সোনা, রুপো, রত্ন নাড়াঘাটা করা বছর ভরের কাজ যুগল দাসবিশ্বাসের। যত না অলঙ্কার বিক্রি হত দোকানে তার থেকেও ঢেড় বেশি অলঙ্কার তৈরি হত।
২২ মার্চ ২০২০ জনতা কার্ফুর স্লোগান ছিলো 'ব্রেক দ্যা চেন'। 'ব্রেক দ্যা চেন' এভাবে বাস্তবের মাটিতে আছড়ে ফেলবে তা ছিল কল্পনাতীত। জনতা কার্ফু দিন থেকেই দোকান বন্ধ ।দেড় মাস দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রসদে টান পড়ে।একমাত্র ছেলের চাকরিতে কোপ পড়ে লকডাউনের দিন কয়েক আগেই । অনলাইন কোচিং ক্লাস করে যৎসামান্য আয় ছেলের। তাই পরিবারের বিকল্প আয়ের জন্য চিন্তা বাড়ছিলো যুগল বাবুর। বড়বাজারের এক বন্ধু সঙ্গে আলোচনা পর ঠিক করে নেন বিকল্প আয়ের পথ।
তৃতীয় দফার লকডাউনের শুরুতেই আদা, রসুন, পেঁয়াজ, আলুর পসরা সাজিয়ে বসে যান সোনার দোকানে। অলঙ্কার দোকানে আদা, পেঁয়াজ, রসুন বিক্রি! তাও কলকাতায়!বিশ্বাস জুয়েলার্সের মালিক যুগল দাস বিশ্বাস জানান,''পাইকারি হারে মাল কিনছি বলে একটু কম দামেই বেচতে পারছি। সোনা তো কেউ এখন কিনছে না তাই আদা, রসুনে ঝুঁকলাম।"পাড়ার বন্ধু অশোক পাত্রকে নিয়ে দোকান চালাচ্ছেন যুগল বাবু। রেখেছেন আরও একজন হেল্পার।অশোাক পাত্র কথায়, "পাড়ার পরিচিত দোকানে কমদামে আদা, পেঁয়াজের খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকাবাসী লাইন দিচ্ছেন দোকানে।"করোনা, লকডাউন যাই আসুক সোনা, রুপো বিক্রি হয়তো বন্ধ হবে; তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় আলু, আদা, পেঁয়াজের চাহিদা থাকবেই। তাই লকডাউন উঠলেও আদা,রসুন, পেঁয়াজ, আলু-ই বেচতে চান যুগল দাসবিশ্বাস।
Arnab Hazra
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Corona, Coronavirus, COVID-19, Home Lockdown, Job Option, Lock Down, Lockdown, Stay Home