#ওয়েলস: আমরা ওয়েলসের রাজধানী শহর কার্ডিফে থাকি, লন্ডন থেকে অনেকটাই দূরে। আমার স্বামী এখানকার হাসপাতালে অর্থপেডিক সার্জেন। কার্ডিফের মানুষজন ভারী আন্তরিক, ছিমছাম, হাসি খুশী। শহরটা চলে ধীরগতিতে। জানুয়ারীতে করোনা ভাইরাসের গুঞ্জন শুরু হলেও এখানে আসল তৎপরতা শুরু হল মার্চ মাসের গোড়ায়। চিন, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ইত্যাদি দেশ থেকে ঘুরে এলে সেটা এয়ারপোর্টে নেমেই জানানো বাধ্যতামূলক করা হল। মার্চের মাঝামাঝি শোনা গেল স্কুল কলেজ বন্ধ হতে পারে। ভারতে ততদিনে 'লকডাউন' শুরু হয়েছে। আমি তখনও প্রতিদিন ছেলেদের স্কুলে দিয়ে আসছি। মার্চের কুড়ি তারিখ জানলাম স্কুল বন্ধ হবার কথা। তাও আগাগোড়া বন্ধ নয়। আবশ্যিক কাজ করেন যাঁরা, অর্থাৎ স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, জল ইত্যাদি পরিষেবা এবং সুপারমার্কেটে কাজ করেন যাঁরা, তাঁদের সন্তানদের জন্য স্কুল খোলা রাখা হল।
ব্রিটেনের নীতি ছিল 'Herd Immunity' তৈরী করা। অর্থাৎ মোটামুটি ৬০ শতাংশ মানুষ অল্প বিস্তর করোনায় আক্রান্ত হলেও সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং তাঁদের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী হবে এই আশায় । কিন্তু তা করতে গিয়ে যা হল, তা এখন চোখের সামনে স্পষ্ট। আমরা তো বাড়িতে বন্দি হয়ে রয়েছি, কিন্তু একের পর খবর যেভাবে এসে পৌঁছচ্ছে আমাদের কাছে, তাতে ভয় করছে। বলা হচ্ছে, এ মুহূর্তে এই দেশে করোনার সর্বোচ্চ প্রকোপ চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে গুরুতর অসুস্থ । কয়েকজন ডাক্তার ও নার্সেরা করোনা আক্রান্ত রুগীর নিয়মিত সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাঁদেরও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যে লকডাউন আরও কড়া ভাবে জারি করা হয়েছে। কিন্তু এই লকডাউনই যদি আগে থেকে জারি করা হত, তাহলে হয়ত আজ ব্রিটেনকে এই দিন দেখতে হত না।
গত তিন সপ্তাহ অনুমতি ছিল সুপারমার্কেট অথবা ওষুধ কেনার জন্য। বেরোনোর পাশাপাশি দিনে একবার কাছাকাছি হাঁটতে বেরোনোর । অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দু’মিটার দূরত্ব রেখে । বহু মানুষ দেখা গেল সেই সুযোগে সমুদ্রের ধারে অথবা Snowdonia পাহাড়ে পৌঁছে গেছেন, ফলে আরও কড়াকড়ি শুরু হয়েছে । মানে ভারতে যেমন চিত্রটা, এখানেও মানুষ সুযোগ পেলে পরিস্থিতি বিচার না করেই ইচ্ছা মতো ঘুরতে শুরু করেছিলেন। তাই আরও কড়া আইন জারি করে সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং বজায় রাখতে সমস্ত পার্ক বন্ধ করা হয়েছে, পুলিশ পথচারীদের, এমনকি চলন্ত গাড়ি থামিয়েও জিজ্ঞাসা করছেন।
লিখতে লিখতে শুনতে পাচ্ছি আবার সেই শুকনো কাশি। টানা দু–তিন সপ্তাহ হাসপাতালে জেনে-না-জেনে বেশ কিছু করোনা আক্রান্ত রুগী ঘেঁটে বাড়ি ফিরেছেন আমার স্বামী গত বুধবার থেকে শুরু হয়েছে একটা ‘অন্য রকম’ কাশি। টেস্টিং কিটের এখন এত টানাটানি, সাতদিনেও পরীক্ষা করা হলো না তাঁর । এখানকার নিয়ম অনুযায়ী সপরিবারে আমরা এখন কোয়ারেন্টাইনে। বন্ধুরা বাজার করে বাড়ির বাইরে রেখে যাচ্ছেন। সমবয়সী এক ডাক্তার বন্ধুর চলেছে ধুম জ্বর, দুবার পরীক্ষা করেও ‘high viral load’ ছাড়া আর কিছু পাওয়া গেল না । করোনা ভাইরাস যেন কোন হিসেব মেলাতে দিচ্ছে না । তেরো বছরের কিশোর, আটত্রিশ বছরের নার্সকেও ছাড়েনি এই দেশে । সকলে শান্ত, শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে থেকে পেরিয়ে চলা দিনের পর দিন, সপ্তাহ। তবে মাথার ওপরের আকাশটি আজকাল ঝকঝকে পরিষ্কার। বসন্তের সেনানী হয়ে ঝলমল করছে উজ্জ্বল হলুদ ড্যাফোডিল। জানলায় জানলায় শিশুদের আঁকা রামধনু আশা জাগিয়ে চলেছে সুদিনের, যার প্রতীক্ষায় আমরা সকলে ।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Coronavirus, COVID-19, London