#কলকাতা: ফাঁকা রাস্তা। শুকনো গাছপালা। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলোর গরম উঁকি। কোথায় লোকজন, কোথায় কোলাহল। যেন মরুভূমি হয়ে গিয়েছে শহর। চারিদিকে মহামারী। গৃহবন্দি মানব জাতি। প্রশাসন, সরকার বার বার সকলকে বাড়ি থাকার অনুরোধ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে, মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, স্প্রে মেশিন হাতে করে বেরিয়ে পড়েছেন একজন। শহর জীবাণু মুক্ত করার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। পথে ঘাটে দেখা মিলছে অভিনেতা নাইজেল আকারার। অভিনয়ের পাশাপাশি নিজের ব্যবসা চালান তিনি। নিজের কোম্পানি 'কলকাতা ফেসিলিটি ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড'-এর কর্মীদের সঙ্গে নেমে পড়ছেন রাস্তায়। এই সমাজের প্রতি কিছু দায় আছে তাঁর। সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দিতে চান তিনি। এই দুর্যোগের সময়, প্রাণ হাতে করে কেন এই মহাযজ্ঞে সামিল হয়েছেন নাইজেল, সে কথা খুলে বললেন নিউজ 18 বাংলাকে।
পরিষেবা দেওয়ার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তিনি। সিকিউরিটি থেকে আরম্ভ করে প্লাম্বার, সমস্ত কিছুই সাপ্লাই দিয়ে থাকেন তাঁর কোম্পানি। পেস্ট কন্ট্রোল, স্যানিটাইজ করা, এই সমস্ত কিছুই গোটা বছর ধরে করে থাকেন নাইজেল ও তাঁর টিম। গোটা বছর যে কাজ করেন, সেই কাজের এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সাধারণ সময় স্যানিটাইজ-এর ওপর তেমন জোর দেন না সাধারণ মানুষ। মূলত ডকে, বাইরে থেকে প্রচুর জিনিসপত্র এলে বা শিপিং হলে ডাক পান নাইজেলরা। বাড়ি কিংবা অফিসের জন্য কেউ তেমন ডাক দিতেন না, আগে। কিন্তু করোনায় এটাই সবচেয়ে প্রয়োজন। যে কাজটা করে থাকেন, সেটা এই মুহূর্তে প্রয়োজন বুঝতে পেরে বাড়িতে নিজেকে আটকে রাখতে পারেননি। নেমে পড়েছেন মানুষকে সাহায্য করতে।
এই প্রসঙ্গে নাইজেল বললেন,' যখন মূলস্রোতে জীবন শুরু করতে চেয়েছি, এই ব্যবসা দিয়ে শুরু করেছিলাম। প্রথম দিকে হাউজকিপিং, পেস্ট কন্ট্রোল, এগুলোই করতাম। এখনো নতুন কোনও ছেলে কোম্পানিতে এলে, আমি তাঁকে ট্রেনিং দিই। তাঁদেরকে নিজের কোম্পানিতে বেশি করে জায়গা দিতে চাই, যাঁরা অন্ধকার থেকে জীবনের মূলধারায় ফিরতে চাইছেন। নতুন করে জীবন শুরু করতে চাইছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাই।'
লকডাউন শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই এই কাজে নেমে পড়েছেন নাইজেল। বিভিন্ন বাড়ি এবং অফিস জীবাণু মুক্ত করার ভার নিয়েছেন তিনি। ব্যবসার জন্য প্রচুর কেমিক্যাল মজুত ছিল। লকডাউনে সবকিছু বন্ধ। তাই ব্যবসা, সে অর্থে চলছে না। অথচ এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্যানিটাইজার, সেটা বাড়িতে মজুদ রেখে চুপচাপ বসে থাকতে পারলেন না নাইজেল। নিজের হাতে তুলে নিলেন এই দায়িত্ব। টিমের সঙ্গে বসে একটি তালিকা বানালেন। ঠিক কোথায় কোথায় লোকজনের আনাগোনা বেশি এবং জীবাণু মুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা বেশি কোন এলাকায়, সেটা মোটামুটি ছকে নিলেন। প্রশাসনকে চিঠি পাঠাতে লাগলেন। বেশ কিছু জায়গা থেকে উত্তর এসেছে। সমস্ত নিয়ম, বিধি, নিষেধ মেনে এই কাজে হাত দিয়েছেন নাইজেল।
সমাজের জন্য নিঃসন্দেহে দারুণ একটা কাজ করছেন তিনি। তবে কোথাও কি ভয় করছে না। মনে একবারও প্রশ্ন আসছে না, এ কাজ করতে গিয়ে যদি এই মহামারী রোগ তাঁর হয়?এই প্রশ্নের উত্তরে নাইজেল বললেন, 'আমি ও আমার টিম সমস্ত রকম প্রিকশন নিয়ে কাজটা করি। এই কাজ করতে যাওয়ার আগে প্রাথমিক শর্ত যেটা রাখি, সেটা হল পুরো এলাকাটা খালি রাখতে হবে, তবেই আমরা সানিটাইজ করবো। তাছাড়া আমার স্ত্রী ডাক্তার। সপ্তাহে তিন দিন হাসপাতালে গিয়ে কাজ করছেন। কখনো আমি ওকে পৌঁছে দিয়ে আসি। আমরা দু'জনে সমাজের জন্য কিছু করতে চাই। ভাল কাজ করছি। তাই ভয় হয় না।'
তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বললেন,' আমরা চার-পাঁচজন এই কাজটা করছি। প্রত্যেকের আলাদা মেশিন রয়েছে। নিজেদের মধ্যে মেশিন অদলা বদলি করি না। কাজ শুরু করার আগে জীবাণু মুক্ত করে শুরু করি। শেষ হলে জামা কাপড়, মেশিন, সব কিছু ভাল করে আবার স্যানিটাইজ করা হয়। আমরা যখন স্প্রে করি তার ১৫-২০ ফিট দূরত্বে কেউ থাকে না। নিজেরাও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি। আমরা সাবধাণতা বজায় রেখে কাজটা করি।' ছাত্র জীবনে, কালো অন্ধকার গ্রাস করেছিল তাঁকে। সংশোধনাগারে গিয়ে সত্যিকারে নিজেকে সংশোধন করেছিলেন নাইজেল। এই সমাজ তাঁকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দিয়েছে। তাই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে, বলে মনে করেন তিনি। নাইজেলের কথায়, '১১ বছর ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে সকলে আমাকে পুরোপুরি গ্রহণ করে। যতই ভালো কাজ করার চেষ্টা করুন, কিছু মানুষ থাকেন, তাঁরা আপনাকে গ্রহণ করবেন না। আবার কিছু জন গ্রহণ করেন। সেটাই প্রাপ্তি। কাউকে জোর করে গ্রহণ করানো যায় না। যেটা যায় সেটা হলো, ভালো কাজ করে যাওয়া। এই আশায়, একদিন না একদিন গ্রহণযোগ্যতা পাবেন। আমি অনেকটা পেয়েছি। তাই দায়বদ্ধতা আমার আছে।'
গোটা বছর ধরেই নানা সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন নাইজেল। 'কোলাহল' নামে তাঁর একটি থিয়েটার গ্রুপ আছে। যৌনকর্মী, সমকামী, মাদক আসক্ত মানুষদের নিয়ে বিভিন্ন সময় কাজ করেছেন নাইজেল। পরিবেশ তো বটেই, সমাজ জীবাণুমুক্ত করার কাজও চালিয়ে যান তিনি। পথে ঘাটে বেরিয়ে নাইজেলের উপলব্ধি যে অনেক মানুষ করোনাকে হালকা ভাবে নিচ্ছেন। তাঁর সকলকে অনুরোধ, করোনা যে কতটা ক্ষতিকারক, কী ভাবে ছড়ায় সেটা যেন সকলে বোঝেন এবং বাড়িতে থাকেন।
Arunima Dey
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Coronavirus, Nigel Akkara