দিনহাটা: দু'মাস আগেই কোচবিহারে সভা করতে গিয়ে রাজবংশী যুবক প্রেম কুমার বর্মনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কোচবিহারের মাথাভাঙার কলেজ মাঠে সভা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক৷ সেখানেই তিনি অভিযোগ করেন, গত ২৪ ডিসেম্বর কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা প্রেম কুমার বর্মনকে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে গুলি করে মারে বিএসএফ৷ নিহত যুবকের বাবা, মা এবং দাদাকে মঞ্চে ডেকে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ৷
সেই পরিবারের সঙ্গে দিনহাটার বামনহাটার তাঁবুতে দেখা করতে চলেছেন অভিষেক।নিহত যুবকের শরীর থেকে ১৮০টি গুলির টুকরো উদ্ধার হয়েছে বলেও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট উল্লেখ করে দাবি করেন অভিষেক৷ নিহত প্রেম কুমার বর্মনের বাবা-মাকে মঞ্চে ডেকেও সান্ত্বনা দেন তৃণমূল সাংসদ৷ পাশাপাশি প্রেমের মৃত্যুর বিচার পাইয়ে দিতে এবং অভিযুক্তদের যথাযথ শাস্তি দিতে যতদূর যাওয়া সম্ভব তিনি যাবেন বলেও জানিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুন:ব্যক্তিগত ইগোর লড়াই নয়, লক্ষ্য একটাই! নবান্নের বৈঠকে নীতীশকে কী প্রস্তাব দিলেন মমতা?
গত ফেব্রুয়ারিতে মূলত বাংলা ভাগের চক্রান্তের বিরুদ্ধে কোচবিহারে সভা করেন অভিষেক৷ বক্তব্য রাখতে গিয়েই দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের গীতলদহ এলাকার ভারবাঁধা গ্রামের বাসিন্দা প্রেম কুমার বর্মনের মৃত্যুর প্রসঙ্গ তোলেন অভিষেক৷ তৃণমূল সাংসদ বলেছিলেন, কোচবিহারের বাসিন্দা হলেও বেঙ্গালুরুতে মিস্ত্রির কাজ করতেন বছর চব্বিশের ওই যুবক৷ গত ডিসেম্বর মাসে চার বছর পর বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি৷ ২৪ ডিসেম্বর সকালে বাড়ির কাছে পায়চারি করতে বেরোলে বিএসএফ তাঁকে নৃশংস ভাবে গুলি করে হত্যা করে বলে অভিযোগ করেন অভিষেক৷
আরও পড়ুন: অর্পিতার বাড়ির কোটি-কোটি টাকা কার? মুখ খুললেন পার্থ! উত্তরে তোলপাড় আদালত চত্বর
তৃণমূল নেতা প্রশ্ন তুলেছিলেন, 'ও কী কোনও জঙ্গি ছিল? ওর অপরাধ কি ও রাজবংশী? ও কি সকাল সাতটার সময় মাঠে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল? নাকি ওর কাছ থেকে গরু, বোমা, বন্দুক, সোনাদানা উদ্ধার হয়েছিল৷ যদিও ধরেও নিলাম ও পাচারকারী, তাহলে তো ওকে বেঁধে রাখা যেত, লাঠি দিয়ে মারতে পারত৷ পরে বিচার হত৷ কিন্তু একটা তরতাজা ছেলেকে এ ভাবে কেন গুলি করে মারল? '
অভিষেক আরও বলেছিলেন, নিহত প্রেম কুমার বর্মনের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তাঁর হাতে এসেছে৷ সেই রিপোর্ট উল্লেখ করে অভিষেক জানান, প্রেমের দু' পায়ে অসংখ্য গুলি করা হয়৷ তৃণমূল নেতা বলেন, 'জানেন ওর শরীর থেকে কটা গুলির টুকরো পাওয়া গিয়েছে? ১৮০টা ছররা গুলি মিলেছে প্রেমের শরীরে৷ আমি এক ব্যালিস্টিক বিশেষজ্ঞের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, পায়ে গুলি লাগলেও কেন মৃত্যু হল প্রেমের? ওই বিশেষজ্ঞ আমায় জানান, পা এমন ভাবে জখম হয়েছিল যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই ওর মৃত্যু হয়েছে৷ শরীরে এক বিন্দু রক্ত ছিল না৷'
অভিষেক জানিয়েছিলেন কলকাতায় ফিরেই বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি৷ প্রেমের মৃত্যুর বিচার পেতে তিনি প্রয়োজনে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টেও যাবেন বলে জানান অভিষেক৷ পুলিশকেও যথাযথ পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করেন তিনি৷ প্রেমের মা, বাবা এবং বড় দাদাকেও মঞ্চে ডেকে নেন অভিষেক৷ জড়িয়ে ধরে নিহত যুবকের মাকে সান্ত্বনা দেন তিনি৷ নিজের রুমাল দিয়ে প্রেম কুমার বর্মনের মায়ের চোখের জলও মুছিয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতা৷ যে কোনও প্রয়োজনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য প্রেমের দাদাকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার কথাও জানান অভিষেক৷ এ দিন কোচবিহারের দিনহাটাতে এসে সেই প্রেমের পরিবারের সাথেই ফের সাক্ষাৎ করতে চলেছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Abhishek Banerjee, Coochbehar, TMC