নয়াদিল্লি: অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী হোন কিংবা নতুন, এ কথা মোটামুটি সবাই জানেন কম ঝুঁকির বিনিয়োগই পোর্টফোলিওকে স্থিতিশীল করার চাবিকাঠি। কিন্তু সমস্যা হল নিরাপদ রিটার্ন পাওয়া যায় এমন বেশিরভাগ বিনিয়োগ বিকল্পগুলোতেই সুদের হার অত্যন্ত কম। ফলে যে রিটার্ন মেলে তাতে খুব একটা লাভ হয় না। তবে বর্তমানে অবস্থা বদলেছে।
আসলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে ২০২২ সালের মে মাস থেকে চারবার রেপো রেট বাড়িয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। এর ফলে ঋণ ব্যয়বহুল হয়েছে। কিন্তু ফিক্সড ডিপোজিটে সুদের হারও বেড়েছে। ফিক্সড ডিপোজিটে নির্দিষ্ট সময়ে এককালীন অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। অ্যাকাউন্ট খোলার সময়ই সুদের হার নির্ধারণ করা হয়। মেয়াদ শেষে সেই অনুযায়ী রিটার্ন মেলে। মে মাস থেকে ১৯০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট বেড়েছে। সেই অনুযায়ী ব্যাঙ্কগুলোই সুদের হার বাড়িয়েছে। ফলে ফিক্সড ডিপোজিটে বিনিয়োগ এখন আগের চেয়ে লাভজনক। তাছাড়া ফিক্সড ডিপোজিট এমনিতেই জনপ্রিয় বিনিয়োগ মাধ্যম। কারণ এটা সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত এবং মেয়াদ শেষে রিটার্নের গ্যারান্টি থাকে। ফলে মধ্যবিত্ত মানুষ সঞ্চয়ের জন্য ফিক্সড ডিপোজিটের উপর অনেকটা ভরসা করেন। এখন সেটাই আরও লাভজনক।
আরও পড়ুন: টাকা লেনদেনে ইউপিআই ব্যবহার করেন? এই ভুলগুলি করছেন না তো? জেনে নিন, নয়তো লোকসান!
আর্থিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিক্সড ডিপোজিটে সুদের হার বৃদ্ধির ফলে পেনশনভোগী এবং প্রবীণ নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। দেশে সেপ্টেম্বর মাসে খুচরো মুল্যস্ফীতি বেড়ে ৭.৮ শতাংশে পৌঁছেছে। পাঁচ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। এই পরিস্থিতিতে ফিক্সড ডিপোজিটে ৭ শতাংশের বেশি রিটার্ন পাওয়া গেলে অনেক বিনিয়োগকারীর কাছেই এটা আকর্ষণীয় বিনিয়োগ মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া আগামী দিনে ফিক্সড ডিপোজিটে সুদের হার আরও বাড়তে পারে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও আবার রেপো রেট বাড়াতে পারে। কারণ মুদ্রাস্ফীতি ৪ শতাংশে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে তা ৬ শতাংশের উপরে রয়েছে। এই কারণেই আগামী দিনে ফের রেপো রেট বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
নতুন বছর শুরু হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা কমপাউন্ডিংয়ের মাধ্যমে উচ্চ সুদের হারকে কাজে লাগিয়ে ভাল রিটার্ন জেনারেট করতে পারেন। দেশে বাজাজ ফিনান্সের মতো কিছু সংস্থা ফিস্কড ডিপোজিটে সবচেয়ে বেশি সুদ দেয়। বর্তমানে প্রায় ৭.৯৫ শতাংশ। কম ঝুঁকিতে বেশি রিটার্ন পাওয়া যেতে পারে এমন দুটি বিনিয়োগ বিকল্পের হদিশ এখানে দেওয়া হল।
বাজাজ ফিনান্সের সেরা ফিস্কড ডিপোজিট রেটের মাধ্যমে উপার্জন বৃদ্ধি: বাজাজ ফিনান্সে সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করা যায়। সঙ্গে মেলে দেশের সেরা এফডি রেট। সুদের হার ৬.৬০ শতাংশ থেকে শুরু হয়। এরপর বিনিয়োগকারীর প্রোফাইল, টাইমলাইন এবং সুদের অর্থ প্রদানের উপর ভিত্তি করে সেটা ৭.৯৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠতে পারে। বিনিয়োগকারীর প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে মেয়াদ এবং পেআউট ফ্রিকোয়েন্সি বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। ১২ মাস থেকে ৬০ মাস পর্যন্ত মেয়াদের ফিক্সড ডিপোজিট করা যায়। নিয়মিত বিরতিতে কিংবা মেয়াদ শেষে মেলে মোটা রিটার্ন। শুধু তাই নয়, বাজাজ ফিনান্স প্রতি মাসে, প্রতি ত্রৈমাসিক, বার্ষিক বা দ্বিবার্ষিক হারে সুদ দেয়। এই নন-কমিউলেটিভ এফডি প্রবীণ নাগরিকদের পাশাপাশি সাধারণ বা নিয়মিত বিনিয়োগকারীদের জন্যও দুর্দান্ত পছন্দ হতে পারে। বেশি সুদ পেতে চাইলে বিশেষ মেয়াদ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতাও রয়েছে। বাজাজ ফিনান্সের ১৫, ১৮, ২২ এবং আরও অনেকগুলি মেয়াদ রয়েছে।
আরও পড়ুন - ব্রাইটনেস ভলিউম ফুল রেখে স্মার্টফোন দেখেন? অজান্তেই বিস্ফোরণের সম্ভাবনা ডেকে আনছেন
ফিক্সড ডিপোজিটে সর্বাধিক পেআউট পেতে তিনটি কৌশলের কথা জানিয়েছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞরা। সেগুলি হল – দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ, মেয়াদপূর্তিতেই টাকায় হাত দেওয়া এবং ফিক্সড ডিপোজিটে সবচেয়ে বেশি সুদের জন্য বিশেষ মেয়াদ বেছে নেওয়া। প্রবীণ নাগরিক এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজাজ ফিনান্সের ফিক্সড ডিপোজিটে বিনিয়োগ করে কত টাকা পেতে পারেন? পরিসংখ্যান বলছে, ৪৪ মাসের জন্য ৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রবীণ নাগরিকরা ৭.৯৫ শতাংশ হারে সুদ পাবেন, তাহলে সম্পূর্ণ মেয়াদ জুড়ে তাঁর প্রাপ্য সুদের পরিমাণ হয় ১,২৯,৫১৩ টাকা। মেয়াদ শেষে ৫,২৯, ৫১৩ টাকা রিটার্ন মেলে। ৪৪ মাসে ৪ লাখ টাকা যদি কোনও সাধারণ বিনিয়োগকারী রাখেন তাহলে তিনি ৭.৭০ শতাংশ হারে সুদ পান। তাহলে সুদ থেকে প্রাপ্ত পরিমাণ হয় ১,২৫,০৩০ টাকা। মেয়াদ শেষে ৫,২৫,০৩০ টাকা রিটার্ন মেলে। এখন যদি ৩৬ মাসে কোনও প্রবীণ নাগরিক ৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন তাহলে তিনি ৭.৭৫ শতাংশ হারে সুদ পাবেন। সুদ থেকে প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ হবে ১,০০,৩৯৪ টাকা। মেয়াদ শেষে রিটার্নের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫,০০,৩৮৪ টাকা। ৩৬ মাসে কোনও সাধারণ বিনিয়োগকারী ৪ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করলে ৭.৫০ শতাংশ হারে সুদে ৯৬,৯১৯ টাকা পাবেন। তাহলে মেয়াদ শেষে তিনি ৪,৯৬,৯১৯ টাকা রিটার্ন পাবেন।
নিয়মিত বিনিয়োগের জন্য সিস্টেমেটিক ডিপোজিট প্ল্যান: সাধারণত সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানের মাধ্যমে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা হয়। তবে বাজাজ ফিনান্স সিস্টেমেটিক ডিপোজিট প্ল্যানের মাধ্যমে ফিক্সড ডিপোজিটে বিনিয়োগ করার একটি বিশেষ স্কিম নিয়ে এসেছে। ১ বছর থেকে ৫ বছর মেয়াদে সিস্টেমেটিক ডিপোজিট প্ল্যানের মাধ্যমে প্রতি মাসে ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা যাবে। বিনিয়োগকারীর করা প্রতিটা ডিপোজিটে বর্তমান ফিক্সড ডিপোজিটের সুদের হারে একটি নতুন ফিক্সড ডিপোজিট খুলে যাবে। এভাবে নিয়মিত বিনিয়োগের মাধ্যমে সহজে বিনিয়োগের অভ্যাস গড়ে উঠবে। নিয়মিত উপার্জন বা একটি নির্দিষ্ট তারিখে পেআউট পেতে বিনিয়োগকারী মাসিক ম্যাচিউরিটি স্কিম এবং একক ম্যাচিউরিটি স্কিমের মধ্যে বেছে নিতে পারেন।
এই স্কিমে যদি কেউ ৬০ মাসের মেয়াদে ১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন তাহলে তিনি কত টাকা রিটার্ন পেতে পারেন? প্রবীণ নাগরিক যদি ৬০ মাসের ফিক্সড ডিপোজিটে ১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন তাহলে তিনি ৭.৭৫ শতাংশ হারে সুদ পাবেন। প্রতিটা ডিপোজিট থেকে মোট সুদ দাঁড়াবে ৬,৮৭৬ টাকা। মাসিক পেআউট হবে ২১,৭৮৬ টাকা। মেয়াদ শেষে তিনি ১,৯৬,৭৯৪ টাকা রিটার্ন পাবেন। সাধারণ বিনিয়োগকারী যদি ৬০ মাসের মেয়াদে ১৫ হাজার টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করেন তাহলে তিনি ৬.৫০ শতাংশ হারে সুদ পাবেন। প্রতিটা ডিপোজিট থেকে প্রাপ্ত সুদের পরিমাণ হবে ৬,৫৩৪ টাকা, মাসিক পেআউট হচ্ছে ২১,৫৩৪ টাকা। আর মেয়াদ শেষে মিলবে ১,৯৩,৫১০ টাকা রিটার্ন।
এই দুটি স্কিমে অনলাইনেই বিনিয়োগ করা যায়। অর্থাৎ শারীরিকভাবে যাওয়ার কোনও দরকার নেই। শুধু তাই নয়, কত টাকা বিনিয়োগ করলে মেয়াদ শেষে কত রিটার্ন মিলতে পারে সেটা অনলাইন ফিক্সড ডিপোজিট ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ জেনে নেওয়া যায়। বাজাজ ফিনান্স সমস্ত গ্রাহকদের জন্য সুবিধা মতো মেয়াদ বেছে নেওয়ার সুবিধা দিয়েছে। বিনিয়োগ করার সময়, ১২ মাস থেকে ৬০ মাস পর্যন্ত যে কোনও মেয়াদ বেছে নেওয়া যায়। প্রতিটি বিনিয়োগের জন্য সুদের হার বিনিয়োগকারীর দ্বারা নির্বাচিত মেয়াদের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। বিনিয়োগকারী অকাল প্রত্যাহারের সুবিধাও পান। নতুন বছরে আর্থিক লক্ষ্যে পৌঁছতে এই স্কিমগুলি বিনিয়োগকারীর বড় হাতিয়ার হতে পারে। ভ্রমণ, সন্তানের শিক্ষা, বাড়ি বা গাড়ি কেনার স্বপ্ন নিয়েও এই স্কিমে বিনিয়োগ করা যায়। কারণ মোটা রিটার্ন যা আর্থিক লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করবে।
ফিস্কড ডিপোজিটের সবচেয়ে ভাল দিক হল এর সঙ্গে বাজারের অস্থিরতা এবং ওঠানামার কোনও সম্পর্ক নেই। বিনিয়োগকারীর কষ্টার্জিত টাকা নিরাপদে বাড়ে। মেয়াদ শেষে মেলে নিশ্চিত রিটার্ন। শুধু তাই নয়, বাজাজ ফিনান্স ফিক্সড ডিপোজিটে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুদ তো মেলেই, পাশাপাশি ক্রিসিল এএএ/স্টেবল এবং (আইসিআরএ) এএএ (স্থিতিশীল)-এর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা রেটিংও রয়েছে। এর অর্থ হল বিনিয়োগকারী তাঁর প্রাথমিক বিনিয়োগ এবং প্রয়োজনে যোগদানের জন্য সময়মতো সুদের পরিশোধের জন্য নিশ্চিন্তে নির্ভর করতে পারেন। সোজা কথায় কম ঝুঁকি কিন্তু মোটা রিটার্ন পেতে চাইলে এই স্কিম আদর্শ।
ফিক্সড ডিপোজিটে বিনিয়োগের বিশেষত্ব:
ক) অন্যান্য বিনিয়োগ বিকল্পের তুলনায় এফডি-তে বিনিয়োগ নিরাপদ বলে মনে করা হয়, কারণ বাজারের উত্থান-পতনের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। ফলে বাজারে যাই হোক বিনিয়োগে তার কোনও প্রভাব পড়ে না।
খ) ফিক্সড ডিপোজিটে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিনিয়োগের সুদ পাওয়া যায়।
গ) বিনিয়োগকারী নিজের সুবিধা মতো মেয়াদে তাঁর অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন।
ঘ) সর্বোচ্চ জমার কোনও সীমা নেই।
ঙ) প্রবীণ নাগরিকরা ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে জমার উপর উচ্চ হারে সুদ পান।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Fixed Deposit, Investment