#কলকাতা: এবার রেলপথে ভারত থেকে বাংলাদেশ যাচ্ছে পিকআপ ভ্যান। মিনি ট্রাকের পরে এবার পিক আপ ভ্যান বাংলাদেশে পাঠানোর জন্যে বিশেষ রেকের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রক। মহারাষ্ট্র থেকে বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশ যাবে এই বিশেষ ট্রেন। যার মধ্যে থাকছে ৭৫টি পিকআপ ভ্যান।
রেল মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল জানিয়েছেন, "রেল ইতিমধ্যেই পণ্য পরিবহণের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। লকডাউন অধ্যায়ে পণ্য পরিবহণের সংখ্যাও বেড়েছে। এবার সেই পরিকল্পনায় রেকে করে পাঠানো হচ্ছে এই পিক-আপ ভ্যান। আগামী দিনে চাহিদা বাড়লে রেকের সংখ্যা বাড়ানো হবে।" রেলমন্ত্রী ট্যুইট করে রেকে পিকআপ ভ্যান লোডিংয়ের ভিডিও পোস্ট করেছেন।
কিছুদিন আগেই রেল পথে ভারত থেকে বাংলাদেশ গেল মিনি ট্রাক। এই প্রথম বিশেষ কন্টেনার বা বগিতে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ছোট ছোট পণ্য বাহী ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান। এর আগে দেশের মধ্যে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বড় লরি। রো-রো চাপিয়ে তা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এবার পড়শি রাষ্ট্র বাংলাদেশেও পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। এই সব স্পেশাল রেকে করে বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশ যাবে এই সব গাড়িগুলি।
রেল মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ১১৮টি ট্রাক পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশে। প্রথম বার এই ধরনের কোনও পণ্য দেশের বাইরে সরবরাহ হচ্ছে রেল মারফত। ভারতের লঙ্কা ও পেঁয়াজের পরে পোশাক, রাসায়নিক ও অন্যান্য জিনিস পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছিল। বিশেষ পণ্যবাহী ট্রেন উত্তরাখণ্ড থেকে রওনা হয়েছে বাংলাদেশ। বেনাপোল পেরিয়ে এবার নিয়মিত চলাচল করবে এই পণ্যবাহী ট্রেন। কিছুদিন আগেই কলকাতা থেকে CONCOR-এর ট্রেন বাংলাদেশ রওনা হয়েছিল। কিছুদিন আগেই পশ্চিম ভারতের গুজরাতের কাঁকাড়িয়া থেকে বাংলাদেশ ভায়া বেনাপোল হয়ে অন্যান্য জিনিস সরবরাহ হয়েছিল।
পোশাক ও রাসায়নিক চাহিদা দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। এতদিন জলপথে পাঠানো হত যা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ। এছাড়া পণ্য গাড়িতে কলকাতা আসত সেখান থেকে জলপথে বা গাড়িতে বাংলাদেশ যেত। সেটিও সময় ও খরচ সাপেক্ষ। তাই আপাতত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রেল পথেই এভাবে সমস্ত পণ্য পৌছে দেওয়া হবে। আপাতত সপ্তাহে চারটি করে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে কন্টেনার বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশ যাবে। প্রতিটি কন্টেনারে আর এফআইডি কোড থাকবে। ফলে কোনও ধরনের সমস্যা হবে না। কন্টেনার কোথায় থাকবে তার অবস্থান জানা যাবে। এর ফলে ভারতীয় রেল মারফত পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোগ সফল হল বলে মত রেল আধিকারিকদের।
রেল মন্ত্রক সূত্রে খবর, এর আগে দু'বার দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলাদেশের বেনাপোলের উদ্দেশে শুকনো লঙ্কা বোঝাই ভারতীয় রেলের এক বিশেষ পণ্যবাহী ট্রেন গুজরাতের ধোরাজি থেকে রওনা হয়ে তা বাংলাদেশ গিয়েছিল। পশ্চিম ভারতের গুজরাতের ধোরাজি ও পার্শ্ববর্তী এলাকা লঙ্কা চাষের জন্য বিখ্যাত। এখানকার লঙ্কা আন্তর্জাতিক স্তরেও প্রসিদ্ধ, বিশেষ করে এর স্বাদ ও ব্র্যান্ডের জন্য। আগে ধোরাজি ও পার্শ্ববর্তী এলাকার কৃষক তথা ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে সড়কপথে শুকনো লঙ্কা পাঠাতেন। সড়কপথে পরিবহণের জন্য প্রতি টনে খরচ পড়তো প্রায় ১২ হাজার টাকা। এমনকী, একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ শুকনো লঙ্কা সরবরাহ করা যেত না। স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেকবার পরিবহণের জন্য খরচও সমান হারে বাড়ত। লকডাউনের সময় ধোরাজি ও পার্শ্ববর্তী এলাকার চাষিরা সড়কপথে এই লঙ্কা বাংলাদেশে পাঠাতে পারেনি। যদিও ব্যাপক চাহিদা ছিল এই শুকনো লঙ্কার। এই অবস্থায় রেল কর্মী ও আধিকারিকরা কৃষক প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রেলপথে পণ্য পাঠানোর কথা বলেন।
রেলের কর্মী ও আধিকারিকদের এই চেষ্টার কারণে ব্যবসায়ীরা শুকনো লঙ্কা বিপুল পরিমাণে পণ্যবাহী ট্রেনে করে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যাপারে সম্মতি প্রকাশ করেন। সেই কাজ শুরু হয়। অবশেষে রেল পথে ধোরাজির লঙ্কা পরিবহণ শুরু হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে প্রত্যেকবার দেড় হাজার টনেরও বেশি লঙ্কা বাংলাদেশে পাঠানো সম্ভব হবে। পশ্চিম রেলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে শুকনো লঙ্কা বাহী বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। রেল কর্তৃপক্ষের এই ব্যবস্থার ফলে ধোরাজি ও পার্শ্ববর্তী এলাকার কৃষকদের শুধু লঙ্কা নয় আরও অনেক উৎপাদিত ফসল বেশি পরিমাণে দেশের অন্যত্র বা বাংলাদেশে সরবরাহের সুবিধা বেড়ে গেল। পশ্চিম পক্ষ থেকে শুকনো লঙ্কাবাহী একটি পণ্যবাহী ট্রেন ১৬টি কন্টেনার নিয়ে বাংলাদেশের বেনাপোলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ট্রেনটিতে প্রায় ৩৮৪ টন শুকনো লঙ্কা ছিল। রেলপথে প্রতি টন শুকনো লঙ্কা পরিবহণ খাতে খরচ পড়ছে ৪ হাজার ৬০৮ টাকা, যা সড়কপথের প্রতি টন পিছু খরচ ১২ হাজার টাকার তুলনায় অনেক কম এবং ব্যয় সাশ্রয়ী। এছাড়া দক্ষিণ ভারত থেকে এর আগে পেঁয়াজ পাঠানো হয়েছিল। দুটি ক্ষেত্রেই এই ধরনের কৃষিজাত দ্রব্য পাঠানো সফল হয়েছে। এছাড়া চলতি মাসেই রাসায়নিক ও পোশাক পাঠানোর কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে। রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতীয় রেল কোভিড মহামারির সময় পণ্যবাহী ট্রেন পরিষেবা বাড়াতে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। গত ২২ মার্চ থেকে ২৫ অগাস্ট পর্যন্ত ভারতীয় রেল প্রায় সাড়ে নয় হাজার পণ্যবাহী ট্রেন পরিষেবা দিয়েছে। এর মধ্যে ৯২ শতাংশ ট্রেন সঠিক সময়ে পণ্য পৌছে দিতে পেরেছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
ABIR GHOSAL
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Indian Railways